আমাদের সিলেট ডটকম:
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। আগামী ১৯শে ফেব্র“য়ারী অনুষ্ঠিত হবে ৪র্থ বারের মতো বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৩ শক্তিশালী প্রার্থী। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৭ প্রার্থী ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৪ প্রার্থী।
গত মঙ্গলবার প্রতিক বরাদ্ধের পর থেকে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নির্বাচনের মূল প্রচার কাজ। পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানারে চেয়ে গেছে উপজেলা সদর সহ প্রত্যন্ত অঞ্চল। ভোট চেয়ে চলছে মাইকিং। চেয়ারম্যান পদে শক্তিশালী তিন প্রার্থী হওয়ায় ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, নিজ পরিচিতির পাশাপাশি বিগত সরকারের বিভিন্ন সফলতার চিত্র জনসম্মুখে তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফিরোজ খান পংকি ‘মোটরসাইকেল’ প্রতিকে ভোট চাচ্ছেন। অপরদিকে, বিএনপি তথা ইলিয়াস পরিবার সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুহেল আহমদ চৌধুরী বিগত উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে নিজ পরিচিতি ও ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলী ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ‘কাপ-পিরিছ’ প্রতিকে ভোট চাচ্ছেন। অন্যদিকে, নাগরিক কমিটির মনোনিত প্রার্থী ও খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী নিজের ব্যক্তিগত ইমেজ ও পাশাপাশি ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ ইস্যুতে নিজে আন্দেলনে যে অগ্রনি ভূমিকা পালন করেছেন সেটাকে কাজে লাগিয়ে ‘আনারস’ প্রতিকে ভোট চাচ্ছেন। এছাড়া ব্যক্তি ও দলীয় ইমেজ নিয়ে প্রচারনায় পিচিয়ে নেই ভাইস-চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরাও।
৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বিশ্বনাথ উপজেলা। গত নির্বাচনে এই উপজেলা মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৫ শত ১৮ জন। ঐ নির্বাচনে মোট ৮০ হাজার ৫ শত ৪৭টি ভোট কাস্ট হয়েছিল। যা শতকরা ৬৯.৭২ ভাগ। এবার ১৬ হাজার ৭ শত নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়ে মোট ভোটার সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ২ শত ৬৫ জন। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মুহিবুর রহমান পেয়েছিলেন ২৭ হাজার ৯ শত ৫৭টি ভোট , বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী ফিরোজ খান পংকি পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৬৩টি ভোট, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৫শত ৫১টি ভোট, বিএনপি সমর্থিত তথা ইলিয়াস আলীর মনোনিত প্রার্থী সুহেল আহমদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ১২ হাজার ৬৬টি ভোট।
১ম বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন মুহিবুর রহমান, ২য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী এবং সর্বশেষ ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ৩য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২য় বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন মুহিবুর রহমান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হতে নির্বাচনের পূর্বে মুহিবুর রহমান উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এবারের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হননি। তার মতো গত নিার্বচনে বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান শুভা আক্তার আঙ্গুরাও প্রার্থী হননি। তখনকার উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ভোট পেয়েছিলেন ৪ হাজার ২শত ৮৫টি। কিন্তু বহুল আলোচিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে চমক দেখান এই তরুণ রাজনীতিবীদ। বিগত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী ফিরোজ খান পংকি ও সুহেল আহমদ চৌধুরী ছাড়া অন্যরা এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদকে দলীয় সমর্থন দিলেও জনপ্রিয়তার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী মুহিবুর রহমান বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। এবারের নির্বাচনে মুহিব অনুসারী কেউ প্রার্থী হননি। গত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সুহেল আহমদ চৌধুরীর চেয়ে প্রায় ৫হাজার ভোট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী ফিরোজ খান পংকি। ৪র্থ অবস্থানে ছিলেন সুহেল। ঐ নির্বাচনের পরপরই বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন বিশ্বনাথের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ফিরোজ খান পংকি। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপি থেকে একক প্রার্থী থাকলেও জোটগতভাবে সমযোতা না হওয়ায় নাগরিক কমিটির ব্যানারে জামায়াত একক প্রার্থী দিয়েছে। ইতিমধ্যে নাগরিক কমিটির প্রার্থী ও গত ইউপি নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চেয়ারম্যান পদে ফিরোজ খান পংকি ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আলতাব হোসেনকে আওয়ামী লীগ এককভাবে সমর্থন দিয়েছে। অপর দিকে, ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর নানা ইস্যুতে ধীরে ধীরে ‘একাট্টা’ বিশ্বনাথ বিএনপি দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। দলে দেখা দেয় গ্রæপিং। দুই-তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। তারই ধারাবাহিকতায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলের মধ্যে বিভক্তি প্রকট হয়ে পড়ে। বিএনপি একক প্রার্থী মনোনিত করতে গিয়ে উর্ধ্বতন নেতাদের হিমশিম খেতে হয়। এক পর্যায়ে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পত্নী রুশদী লুনা ঢাকা থেকে বিশ্বনাথে ছুটে আসেন এবং চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভাবে একক প্রার্থী হিসেবে সুহেল আহমদ চৌধুরীকে ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির আরেক সহ-সভাপতি আবুল কালাম কছিরকে মনোনিত করেন। তখন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোজাহিদ আলী ও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গৌছ খান অনেকটা মনোক্ষুন্ন হয়ে সভা ত্যাগ করেন। এরপর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গৌছ খান উপজেলা সহকারি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গিয়েও শেষ মুহুর্তে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। দলের সাধারন নেতা-কর্মী অনেকেই ইলিয়াস পতœীর ওই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে অধিকাংশ নেতা-কর্মীই জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোজাহিদ আলী অথবা গৌছ খানকে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কাউকেই মনোনয়ন না দেয়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তিটা আরো প্রকট হয়। শেষ পর্যন্ত দলের একক প্রার্থী হিসেবে নিশ্চিত হন সুহেল আহমদ চৌধুরী। তবে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দিতে চাইলেও দলের বিভক্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে লুনার মনোনিত প্রার্থী আবুল কালাম কছির ছাড়াও নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন উপজেলা যুবদলের আহŸায়ক আহমেদ নুর উদ্দিন ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মিছবাহ উদ্দিন। এতে করে উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় আরো বেড়ে গেছে।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশা করেছিলেন বিজয় নিশ্চিত করতে জোটগতভাবে একক প্রার্থী দেওয়া হবে। তাও সম্ভব হয়নি। জামায়াতের সাথে আলাপ-আলোচনা না করে সুহেল আহমদ চৌধুরীকে একক প্রার্থী মনোনিত করায় শেষ পর্যন্ত ইলিয়াস পতœী লুনার ডাকে সাড়া দেয়নি জামায়াত। দলীয় প্রার্থী গোষণার পর জামায়াতের উর্ধ্বতন নেতাদের সাথে লুনা টেলিফোন করেও সমযোতা করতে ব্যর্থ হন। তাই নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফিরোজ খান পংকি বিগত সরকারের ইতিবাচক বিষয় ও ব্যক্তি ইমেইজ, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সুহেল আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারের নেতিবাচক ইস্যু ও ইলিয়াস পরিবারের ইমেইজ এবং নাগরিক কমিটির প্রার্থী নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী নিজের ব্যক্তি ইমেইজ, ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’ ইস্যু ও সরকারের নেতিবাচক ইস্যু কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরনি পার হতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে তিন প্রার্থীই এই মূহুর্তে মূল প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকলেও শেষ মূহুর্তে টিকে থাকতে হলে তাদেরকে অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করতে হবে।
বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থী যদি শেষ মুহুর্তে যদি তারা সমান তালে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন তাহলে আ’লীগের প্রার্থী ফিরোজ খান পংকির বিজয় ঠেকানো কঠিন হবে। অন্যদিকে, বিএনপি যদি দলে ৩ ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীর ক্ষেত্রে একক সিদ্ধান্তে আসে এবং দ্বিধা-বিভক্ত বিএনপিকে একাট্টা করে ইলিয়াস ইস্যুকে জাগিয়ে তুলতে পারে তাহলে বিএনপির প্রার্থী সুহেল আহমদ চৌদুরীর বিজয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকবে। অপর দিকে, অগোছালো বিএনপি’র এমন অবস্থা থাকলে, আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট, ১৯দলীয় জোটের শরিক অপরাপর দল ও হেফাজতের ভোট বেশী করে টানতে পারলে এবং উত্তর বিশ্বনাথের ৪ ইউনিয়নের একক প্রার্থী হিসেবে নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকীর পক্ষে বিজয় নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে তার সমর্থকরা মনে করছেন।
বিশ্বনাথ মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা পাল্টে যেতে পারে হিসাব-নিকাস
Thursday, February 6, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment