ক্রেস্ট নয়,ক্যাশ চাই ক্যাশ – জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ

Saturday, February 8, 2014

মানবজমিন: রাজনৈতিক সংবর্ধনায় প্রকাশ্যে উপঢৌকন হিসেবে ক্যাশ টাকা চাইলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের দেয়া ক্রেস্ট গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে সদ্য নির্বাচিত চিফ হুইপ প্রকাশ্যে মাইকেই ঘোষণা দেন উপঢৌকন হিসেবে নগদ (ক্যাশ) অর্থ গ্রহণের। এ জন্য পরবর্তী দিন দলীয় কার্যালয়ে তিনি অবস্থানের কথাও জানান। অর্থ গ্রহণের যুক্তি হিসেবে জনসমক্ষেই বলেন, নির্বাচন করতে অনেক লাগে, ক্যাশ দিয়েন, ভাল হয়। ঘটনাটি ঘটেছে চিফ হুইপের নিজ নির্বাচনী এলাকার বাউফলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এতে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানটি স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরদের মাধ্যমে সরাসরি সমপ্রচার করা হয়। শুক্রবার ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর গতকাল হুইপ ফিরোজের বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে জেলার সর্বত্র। এটি ক্রমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। মানবজমিনের হাতে আসা অনুষ্ঠানের ভিডিওতে দেখা যায় অনুষ্ঠানের শেষাংশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চিফ হুইপকে ক্রেস্টসহ উপঢৌকন দিচ্ছিলেন। কোন একজন ক্রেস্ট দেয়ার সময় হুইপ তা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে মাইকে বলতে থাকেন, সমস্ত ক্রেস্ট আমি পরে নেবো। এখন দয়া করে পটুয়াখালী জেলা থেকে যারা আসছেন দু’একজন বলবেন, আমাদের প্রধান অতিথি, আমি বলবো তারপর আমাদের সভাপতি উনিও বলবেন। কাজেই সময় নাই। যার যার তাড়া আছে আগামীকাল ৯টার থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আমার দলীয় কার্যালয়ে জনতা ভবনে আমি বসবো। যদি কেউ উপঢৌকন দেয়ার ইচ্ছা থাকে তবে… ক্যাশ চাই ক্যাশ… টাকায়। কথাটা বোঝেন নাই, নির্বাচন করতে গেলে অনেক লাগে। কাজেই ক্যাশ দিয়েন… খুব ভাল হবে, এগুলোর দরকার কি।

চিফ হুইপের এ বক্তব্যে বিব্রত হন উপস্থিত নেতাকর্মীরাই। এদিকে আগের দিনের ঘোষণা মতো চিফ হুইপ গতকাল সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তার কার্যালয়ে বসেন। সেখানে অনেক নেতাকর্মীও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। ক্যাশ চাওয়ার বিষয়ে গতকাল চিফ হুইপ জানিয়েছেন, তিনি ক্যাশ চেয়েছেন ঠিক। তবে তা চেয়েছেন দলের জন্য। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মানবজমিনকে তিনি বলেন, আমি বলেছি ফুল দিয়ে টাকা নষ্ট না করে দলের জন্য খরচ করেন। চিফ হুইপ বলেন, গল্পের ছলে উৎসব অনুষ্ঠানে মানুষ অনেক কথা বলে থাকেন। আমিও সে রকমই বলেছি।

চিফ হুইপের বক্তব্যের বিষয়ে গতকাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন ফরাজি বলেন, প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে ভিডিও দেখে হতবাক হয়েছি।

শুক্রবার বিকালে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্থানীয় পাবলিক মাঠে এ গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. হারুনুর রশীদ খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পটুয়াখালী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান মৃধা, বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ আজিজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান মোশারেফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর প্রমুখ। এছাড়াও মঞ্চে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম সাদুকুর রহমান, বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নরেশ চন্দ্র কর্মকারসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ৩টায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও সোয়া ৪টায় তিনি মঞ্চে উপস্থিত হন। এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাউফল ডিগ্রি কলেজের সামনে সড়কের দুই পাশে শতাধিক শিক্ষার্থীকে ফুল হাতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

‘এইডা কিন্তু সোনা না’

এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার চিফ হুইপকে সোনালি রঙের একটি নৌকার ক্রেস্ট উপহার দেন। ক্রেস্ট গ্রহণ করে তিনি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন- এ ভাই, এই সাংবাদিক ভাইরা, দ্যাহেন। ভাল কইরগা দ্যাহেন। এইডা কিন্তু সোনা না। কি ভাইরা এইডা সোনা? আমনেরা কি কন? না এইডা সোনা না। আপনারা আবার লেইখেন না এইডা সোনা।

এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বর্ণের নৌকার ক্রেস্ট কিংবা স্বর্ণের কোটপিনসহ নানা ধরনের স্বর্ণখচিত উপহার গ্রহণ করেন আ স ম ফিরোজ। ওই সময় তা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেদিকে ইঙ্গিত করেই চিফ হুইপ এসব কথা বলেন।

জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নির্বাচিত হওয়ার পরে পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ শুক্রবারই প্রথম নিজ নির্বাচনী এলাকায় যান। এ উপলক্ষে ১৫ কিলোমিটার সড়কে শতাধিক তোরণ, সহস্রাধিক ডিজিটাল ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনসহ বর্ণিল সাজে সাজানো হয় বাউফল।

এদিকে শুক্রবার সকালে চিফ হুইপ পটুয়াখালী সার্কিট হাউজে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের প্রতিটি জেলা শহরের প্রেস ক্লাবগুলো সরকারি অর্থায়নে ৫ তলা ভবন করে দেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেবে সরকার। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেনসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, মোট পাঁচবার পটুয়াখালী-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়া আ স ম ফিরোজ রাজনীতিতে আসেন কলেজ জীবন থেকেই। তিনি প্রথমবার সংসদে আসেন ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হলেও পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পঞ্চম, সপ্তম ও নবম সংসদেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তিনি নবম সংসদে হুইপের দায়িত্বে ছিলেন।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License