হাউস অব কমন্সের গ্যালারি থেকে : ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়

Friday, January 17, 2014

অলিউল্লাহ নোমান:


বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্স। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে দীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টার বিতর্ক শেষে স্পিকার কণ্ঠভোটে দেন। সিদ্ধান্তের পক্ষে হ্যাঁ ভোটে বিষয়টি

সর্বসম্মত পাস হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ইতিহাসে বাংলাদেশকে নিয়ে এতো দীর্ঘ আলোচনা অতীতে হয়নি বলে জানা গেছে। এই আলোচনার সময় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে রসিকতা করেন সংসদ সদস্যরা।

স্পিকার সিদ্ধান্ত ভোটে দেয়ার আগে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস মিনিস্টার ডেভিট লেডিংটন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন প্রশ্নবোধক। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধান বিরোধী জোট অংশ নেয়নি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হলে সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান হচ্ছে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা। এখন বাংলাদেশের সংসদে কার্যত এখন কোনো বিরোধী দল নেই।

স্পিকার সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দেয়ার আগে দীর্ঘ আলোচনায় বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচার ব্যবস্থা, মিডিয়ার স্বাধীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানি, র্যাবের ক্রসফায়ার, যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে উঠে আসে।

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি দিনের কার্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয় হিসেবে সাড়ে ১১টায় আলোচনা শুরু হয়। হাউস অব কমন্সের সদস্য সাইমন ডান্সজাক বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রস্তাব জমা দেন। সেটি স্পিকার গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। সাইমন ডান্সজাক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের অন্যতম সদস্য। আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য সদস্যরা সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য সাইমন ডান্সজাককে ধন্যবাদ জানান।

দীর্ঘ বিতর্কে ২০ জন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, এটাকে গণতান্ত্রিক সরকার বলা যায় না। এটা কোনো নির্বাচন নয়। গণতান্ত্রিক সংজ্ঞায় এই নির্বাচন কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আলোচনার সূত্রপাত করেন বাংলাদেশ বিষয়ক অল পার্টি পার্লামেন্ট বিষয়ক চেয়ারম্যান অ্যান মেইন। তিনি আলোচনার সূত্রপাত করে বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন জনগণের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। এই নির্বাচনে কোনো স্বচ্ছতাও ছিল না। এতে জনগণের ইচ্ছার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাদের ইচ্ছামত একটি নির্বাচন করে নিয়েছে। ১/১১-এর জরুরি আইনের সরকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অ্যান মেইন বলেন, আমি আশা করবো শেখ হাসিনা দ্রুত একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে পছন্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হওয়ায় শেখ হাসিনা নিজেই নির্বাচন বয়কট করেছিলেন। তিনি বলেন, অতীত থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা কোনো শিক্ষা নেয়নি।

অ্যান মেইন গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পৃথক আলোচনা করেছি। তখনও রাজপথে মানুষকে দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। তিনি বলেন, দুই নেত্রীকে সমঝোতার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য এবং সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দেয়া হয়। তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, কোনো সরকারই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একমাত্র সদস্য রোশনারা আলী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা কোনো স্বচ্ছ নির্বাচনও হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত ফেবু্রয়ারি থেকে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। রাজপথে রাজনৈতিক সহিংসতা ও পুলিশের গুলিতে অহরহ মানুষ খুন হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশের পক্ষ থেকে অনেক বড় বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে। এখানে অবস্থানরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিকদের আত্মীয় স্বজনরাও রয়েছে। ব্রিটেনে অবস্থানরত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতরাও স্বজনদের নিয়ে আতঙ্কিত।

রিচার্ড ফোলার বলেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সব দায়দায়িত্ব হচ্ছে সরকারি দলের। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বন্দি। অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। বাকি যারা কারাগারের বাইরে রয়েছেন তারা বাড়িতে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বিরোধী দলবিহীন সংসদ। এটা কোনো গণতন্ত্র হতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ইচ্ছামত একটি নির্বাচন করে সব আসন দখল করে নিয়েছেন। বিরোধী দলীয় নেতাকে গৃহবন্দি রেখে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের জন্য একটা হাস্যকর উপাদান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়। কিন্তু সরকারে যারা থাকেন তারা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চায়। তিনি বলেন, বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াছ আলী সহ অনেক নেতাকে গুম করা হয়েছে। মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই। মিডিয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে।

র্যাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে রিচার্ড ফোলার বলেন, র্যাব ধরে নিয়ে বিনা বিচারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারে হত্যা করছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য কোনো শুভ লক্ষণ নয়। র্যাবের ক্রসফায়ার নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে একটি তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা দরকার। তিনি বলেন, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। এটা এখন গণতন্ত্রের অংশ।

প্রস্তাব উত্থাপনকারী সাইমন ডান্সজাক বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এখন কার্যকর কোনো বিরোধী দল নেই। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে কোনো নির্বাচনই হয়নি। ১৫৩ আসন তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে। বাকি ১৪৭ আসনে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে সেটা গণতান্ত্রিক সংজ্ঞায় পড়ে না। এইভাবে একটি দেশে গণতন্ত্র বেঁচে থাকতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। তারপরও সেখানে বিভিন্ন ধর্মের লোকরা বসবাস করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নানা খবর বের হচ্ছে। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি পদ্ধতি। ক্ষমতাসীনরা এই পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করা ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব।

নেইল পেরিস বলেন, নির্বাচিত সরকার হিসেবে বর্তমান সরকারকে মেনে নেয়া যায় না। বিরোধী দলের নেতাকে বাড়িতে আটক রেখে যে নির্বাচন হয় সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষায় ব্রিটিশ সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক সরকার রয়েছে বলা যায় না। বাংলাদেশে দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দুনিয়ার কোনো দেশ এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিনিয়োগ রয়েছে। ব্রিটেনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে সেখানে। অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে বিনিয়োগ নিয়ে ভাবতে হবে।

গেভিন সোকার বলেন, বাংলাদেশের মানুষের পাশে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ভোটের দিন ঘর থেকে বের হয়নি মানুষ। তিনি বলেন, আমার কাছে অনেক ছবি রয়েছে ভোটকেন্দ্রে কোনো মানুষ নেই। ভোটারবিহীন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে অবিলম্বে নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে হবে। গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশের বেশিভাগ মানুষের পাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দাঁড়াতে হবে।

কেরি ম্যাকার্তি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ব্রিটিশ কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত গর্বের। ২০ ভাগ মানুষও এই নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। সুতরাং এটাকে গণতান্ত্রিক সরকার বলা যাবে না। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবিলম্বে সবার অংশগ্রহণের জন্য আরেকটি নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান সব সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। ৫০০-এর বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে ২০১৩ সালে। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করছে র্যাব। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে যা ঘটছে সহজ ভাষায় সেটা হলো প্রশ্নবোধক। জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। প্রশ্নবোধক ট্রাইব্যুনালের বিচারে এই ফাঁসি কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ট্রাইব্যুনালে বিচার ব্যবস্থা চরম পক্ষপাতমূলক। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও স্বাধীন মিডিয়া। কিন্তু বাংলাদেশে বিচার বিভাগ প্রশ্নবোধক। মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও মিডিয়ার সাংবাদিকরা অপহরণ এবং গুম হচ্ছেন।

আলোচনায় আরও জিম ফিস পেট্রিক, জেরিমি করভিন, মার্টিন, বব ব্ল্যাক ম্যানসহ ২০ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন।

এই আলোচনা চলাকালে যুক্তরাজ্যে নিয়োজিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েসসহ কয়েকজন কর্মকর্তা, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা দর্শক গ্যালারিত উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে দর্শক গ্যালারিতে এম এ মালেক, ব্যারিস্টার এম এ সালাম, মোশাহিদ হোসাইন, আবদুল হামিদ চৌধুরী, কয়সর এম আহমদ, মামুনুর রাশিদ মামুন, ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দিন, ব্যারিস্টার আবু সায়েম, প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট তাহের রায়হান চৌধুরী পাবেল, ড. মুজিবুর রহমান, কামাল আহমদ, জসিম উদ্দিন সেলিম, রাজিব আহমদ, মিলহানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, প্রস্তাবটি উত্থাপনকারী সাইমন ডান্সজাক যুক্তরাজ্যের লাংকাশায়ার কাউন্টির রোচডেল এলাকা থেকে নির্বাচিত সদস্য। লেবার পার্টির এই সদস্যের সঙ্গে রোচডেলে অবস্থানরত বাংলাদেশী কমিউনিটি সদস্যদের সুসম্পর্ক রয়েছে। রোচডেলে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিক সাবেক একজন বিএনপি নেতার উদ্যোগে সম্প্রতি বেশ কিছু সেমিনারের আয়োজন করা হয়। কমিটি ফর ডেমোক্রেসি এন্ড হিউম্যান রাইটস নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগ লাঙ্কাশায়ার, মিডলটন, লেইক ডিস্ট্রিকটের কারলাইল, স্কানপসহ বিভিন্ন সংসদীয় আসনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সিরিজ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। প্রত্যেকটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের। তাদের কাছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে এবং বক্তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী অনেক সংসদ সদস্যই বৃহস্পতিবারের আলোচনায় জোরাল বক্তব্য রেখেছেন বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি ও মানবাধিকার নিয়ে। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের এসব সেমিনারে অংশগ্রহণে বিরত থাকার জন্য কঠোর নির্দেশ দেয়া হতো। সেমিনারে অংশ নিলে দলীয় পদ পদবী থাকবে না বলেও হুমকি দেয়া হতো বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীদের। অথচ এসব সেমিনারে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ওয়াদা করে যেতেন তারা বিষয়টি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপন করবেন। তার মধ্যে অন্যতম হলেন সাইমন ডান্সজাক। তিনি একাধিক সেমিনারে অংশ নিয়ে ওয়াদা করেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপনের চেষ্টা চালাবেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি এই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন বলে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য হাউস অব কমন্সের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্তির পর সাইমন ডান্সজাক বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। তারই আলোকে অনেকেই সেদিন দর্শক গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আলোচনাটি উপভোগ করেছেন।


লেখক: দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License