মানবজমিন:ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেছেন, দেশের নতুন সরকারকে বেআইনি বলা যাবে না, আবার এটা বৈধও নয়। সবাই যখন ভোট দেবে, তখনই সরকারকে বৈধ বলা যাবে। তাই দেশের দুই জোটের উচিত আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আদলে করা ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনে ফজলে হাসান আবেদ এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বিজনেস কমিউনিকেটর (আইএবিসি) এর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আর্মি গলফ ক্লাবে এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফজলে হাসান আবেদ। তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে এবারের নির্বাচনটি হয়নি। এ নির্বাচনে সবাই ঠিকমতো ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচন যদি ভালোমতো হতে হয়, তাহলে আরেকটা নির্বাচন লাগবে। সবাই ভোট দিলে যে সরকার আসবে, সেটাই হবে বৈধ সরকার। সুতরাং দুই মহাজোট যত তাড়াতাড়ি আরেকটি নির্বাচন করতে পারে, তত তাড়াতাড়ি দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র মানে আইনের শাসন ও নিজেকে প্রকাশ করার অবাধ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা। সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হলে দুটি দলকেই বদলাতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে দুই দলকে সমানভাবে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।
ফজলে হাসান আবেদ আরও বলেন, দুই দল মিলে যদি নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে, সেটাই হবে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি, দুই দল মিলে যদি সুচিন্তিতভাবে কাজ করে, তাহলে তা সম্ভব।
নির্বাচন পরবর্তী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গণতন্ত্রের প্রথম কথা। সংবিধানে আমরা সবার জন্য সমান অধিকারের কথা বলেছি। গণতন্ত্রে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, সংখ্যালঘুসহ সবার সমান অধিকার থাকবে। তারা কেন হামলার শিকার হবে? যারা হামলা চালাচ্ছে, তারা অবৈধ কাজ করছে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সহিংস হবে না। জামায়াত নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট এ ব্যক্তি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করলে যদি সহিংসতা বন্ধ হয়, তাহলে তা করা উচিত। কিন্তু নিষিদ্ধ করলেই সহিংসতা বন্ধ হবে, এমনটা নয়। অনেক সময় নিষিদ্ধ করলে সহিংসতা বাড়তে পারে। যদি নিষিদ্ধ না করে সহিংসতা বন্ধ করা যায়, তাহলে সেই ব্যবস্থা করা উচিত। নিষিদ্ধ করলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে। তাদের সঙ্গে নিয়ে কিভাবে কাজ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা উচিত।
অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইউন ইয়াং, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আইনুন নিশাত বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই ছায়া জাতিসংঘ সভার আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪১২ জন তরুণ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আদলে মোট ১২টি অধিবেশনে ২০১৫ সালের পর বিশ্বের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার বিষয়ে তরুণদের ভাবনাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে এ সম্মেলনে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া ও কোস্টারিকার প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাভারের আবাসিক ক্যাম্পাসে পাঁচ দিনের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment