কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্তে বিএসএফের মদদে ভারতীয়দের পিটুনিতে নিহত দু-কৃষকের লাশ উদ্যোগের অভাবে ৭ দিনেও ফেরৎ দেয়নি ভারত।
রোববার মাজিদ আলী ও নজর আলীর ক্ষত বিক্ষত ও গলিত লাশের ছবি বিজিবি দেখালে সনাক্ত করতে পারেনি স্বজনরা। নিহতদের পকেট থেকে জব্দকৃত মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ও তাদের পড়নের কাপড়েরর মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করণে বিজিবির মাধ্যমে বিএসএফকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গত শুক্রবার সীমান্তরক্ষী বিজিবি ঘটনাটি গুজব বলে দাবি করলেও নিখোঁজ বাংলাদেশীর সন্ধান চেয়ে গত শনিবার সকালে সহযোগিতা কামনা করে বিএসএফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। এদিকে ৭দিন পার হলেও নিহতদের পরিবার লাশ ফেরৎ না পাওয়ায় চলছে শোকের মাতম।
বুধবার সকালে সাড়ে ১১টায় কুলাউড়ার শরীফপুর সীমানে-র সঞ্জরপুর গ্রামের বেরীর পার এলাকার নিহত কৃষক মাজিদ ও নজর আলীর বৃদ্ধ বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা জানান, এই মুহূর্তে ভারত থেকে বাংলাদেশে লাশ ফেরত আনতে গেলে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহযোগীতা প্রয়োজন। আমরা এই দেশের নাগরিক সরকার কেন লাশ আনতে হাত বাড়াবে না বলে কেঁদে ফেলেন মাজিদ আলীর বৃদ্ধ বাবা। পরিবারের দাবি এখন আর জীবিত পাওয়া যাবে না অন্তত লাশ গুলো দেখার আকুতি তাদের। নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের দাবি লাশ সনাক্ত করতে পারলে ১৫ ডিসেম্বর রোববার দু’টি লাশই ফেরৎ দেবার কথা ছিল।
নিহতদের পরিবারের ক্ষোভ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কিসের জন্য! দেশের নিরীহ ২ জন কৃষক ভারতীয়দের হাতে নির্মম ভাবে পিটুনীর শিকার হওয়া পরও নেই কোন লাশের হদিস। আমরা কোন দেশে বসবাস করছি সাধারন কৃষক হত্যার ৭ দিন পার হলেও সরকারের বিজিবির কাজ কি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার: বিকেলে বাড়ি থেকে তারা মনু নদী অতিক্রম করে জিরো পয়েন্টে অর্থাৎ ভারতের সমরুর পার সীমান্ত এলাকায় গরু চরাতে যাওয়ার পর থেকে ঐ ২ কৃষক নিখোঁজ রয়েছে। সন্ধ্যায় গরুগুলো বাড়ি ফিরে এলেও কৃষক মাজিদ ও নজর ফিরে আসেনি। তাদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ভারতের সমরুর পার গ্রামের তাদের আত্মীয় স্বজনরা জানিয়েছেন ভারতীয় লোকজন লাটি পেটা ও দা দিয়ে কুপিয়ে তাদেরকে গুরুতরভাবে আহত করলে কৈলাশহর হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে তারা মারা যায়।
সঞ্জরপুর গ্রামের দিন মজুর আব্দুল খালিক জানান বিএসএফ ও গ্রামবাসী কর্র্তৃক বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে হত্যাকান্ডের বেশীর ভাগ লাশ বিএসএফ ফেরত দেয়নি। আর লাশ ফেরত চাইলে চোর সাব্যস- করে লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।
গত ১৪ ডিসেম্বর শনিবার ত্রিপুরার দু’টি পত্রিকা দৈনিক সংবাদ ও উত্তর ত্রিপুরায় ‘গণধোলাই-এ দুই বাংলাদেশী চোর নিহত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ দিকে দুই বাংলাদেশী নিহত সম্পর্কে শরীফপুর সীমানে-র বিজিবি ক্যাম্প ও শ্রীমঙ্গলস’ ১৪ বিজিবি ব্যাটেলিয়নে যোগাযোগ করা হলে বিজিবির পক্ষে এ সংবাদটি সঠিক নয় দাবি করা হয়েছে।
অবশেষে শনিবার সকাল ১১টায় চাতলাপুর চেকপোস্ট এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের সাপ্তাহিক নিয়মিত বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবং দুটি লাশের সন্ধানে বিজিবির পক্ষ থেকে একটি চিটি দেয়া হয় বিএসএফকে।
শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন চিনু জানান, তিনি শুনেছেন নিখোঁজ দুই বাংলাদেশীর লাশ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। তবে এ বিষয়ে বিজিবির কর্মকর্তারা এখনও পরিষ্কার ভাবে কোন প্রেস ব্রিফিং করেনি। ২ কৃষকের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন তিনি পরিবারের সদস্যদেরকে বলেছেন দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ২ কৃষক হত্যার সংবাদটি গুরোত্বের সাথে প্রকাশ হয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল ১৪ বিজিবি ব্যাটেলিয়নে দায়িত্বে থাকা লেফটেনেন্ট কর্নেল সাইফ বুধবার দুপুরে টেলিফোনে বলেন, নিহতের পরিবারের দাবি অনুযায়ী ভারত থেকে দুটি ছবি দেখানোর পর লাশ সনাক্ত করতে পারেনি তাদের পরিবার। তিনি জানান, ২ কৃষকের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমের কর্মীদের বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। সীমান- হত্যা কান্ড দেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের বিজিবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন পরিষ্কার প্রেস ব্রিফিং করা যায় কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন তাদের নিয়মের ভিতরে করা যায় না। তবে নিহতদেও কাপড় ও মোবাইল সীমকার্ড আনলে হয়তো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
উল্লেখ্য, সঞ্জরপুর গ্রামের নিহত মাজিদ আলীর পিতা ইয়াকুব আলী ও মাতা মর্তুজা বেগম কেঁদে জানান, সীমান- এলাকায় কৃষক মাজিদ ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দূপুরে গরু চড়াতে গেলে ভারতীয়রা তাকে ধরে নিয়ে বিএসএফ এর উপসি’তিতে ভারতীয় গ্রামবাসী পিঠিয়ে হত্যা করে।
শরীফপুর সীমান্তে ২ বাংলাদেশী কৃষক হত্যার ৭ দিন পরও লাশ ফেরৎ দেয়নি ভারত
Wednesday, December 18, 2013
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment