রাজধানীর গোপীবাগে পিতা-পুত্রসহ ৬ জনকে জবাই করে হত্যা

Saturday, December 21, 2013

পুরান ঢাকার গোপীবাগে পিতা-পুত্রসহ ৬জন খুন হয়েছেন। সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা ফ্ল্যাটে ঢুকে তাদের জবাই করে হত্যা করেছে। ঘটনার পরপরই আশপাশের ফ্ল্যাটগুলোতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থল ঘিরে উৎসুক জনতা ভিড় করে। খবর পেয়ে পুলিশ-র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম ঘটনাস’ল পরিদর্শন করেন। এসময় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি দল ঘটনাস’ল পরিদর্শন শেষে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেন। পরে পুলিশ নিহত ৬জনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। সিক্স মার্ডারের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সন্দেহভাজন ৬জনকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মূলহোতাদের ধরতে অভিযানে নেমেছে। এদিকে হাজারীবাগে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা এক যুবককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতরা হচ্ছেন, লুৎফর রহমান ফারুক (৬০), তার ছেলে মনির হোসেন (৩০), বাসার কেয়ারটেকার মঞ্জু (২৮), শাহীন (২৯), রাসেল (২৮), মুজিবুর সরোয়ার (৩০) ও জমির।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুরান ঢাকার ওয়ারী থানাধীন টিকাটুলীর গোপীবাগের আরকে মিশন রোডের অভয়দাস লেনের ৬৪/৬ নম্বর হোল্ডিংস্থ ৪তলা বাড়ির দোতলার একটি ফ্ল্যাটে। প্রতিবেশী মফিজউদ্দিন এনএনবিকে জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার পাশের ওই বাসায় তিনি চিৎকার শুনতে পান। তখন তিনি ওই বাসায় ডাকাত পড়েছে ভেবে ডাকাত ডাকাত বলে ডাক-চিৎকার দিয়ে ওই ফ্ল্যাটের দিকে ছুটে যান। তখন দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখেন দু’জনের গলাকাটা রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। ফ্ল্যাটের ভেতরে একটি কক্ষের মেঝের উপর আরো ৪জনের গলাকাটা লাশ পড়ে রয়েছে। তিনি আরো জানান, বাড়ির মালিক শারমীন ইসলাম গুলশানে থাকেন। বাসার নিচতলায় মেস ভাড়া দেয়া। প্রায় ৩মাস আগে দোতলার ওই ফ্ল্যাটে নিজেকে পীর-দরবেশ দাবিদার জনৈক লুৎফর রহমান ফারুক ওই ফ্ল্রাটটি ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তার ফ্ল্যাটে প্রায়ই বিভিন্ন বয়সের মুরিদ যাতায়াত করতো। এ খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বাসাবাড়িসহ আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরই সন্ধ্যার পর থেকেই ঘটনাস’লে উৎসুক জনতা ভিড় করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ-র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে ওই ফ্ল্যাটে ঢুকে বিভিন্ন কক্ষ পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় তারা ওই ফ্ল্যাটের তালাবদ্ধ একটি কক্ষ থেকে হাত-পা বাঁধা মুখে স্কচটেপ লাগানো আটক ৪জনকে জীবিত উদ্ধার করেন। এরপরই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত পিতাপুত্রসহ ৬জনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ওয়ারী থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ৬জন খুন হওয়ার পেছনে ডাকাতির কোন সংশ্লিষ্টতা তাৎক্ষণিক বোঝা যায়নি। তবে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ইতিমধ্যেই সন্দেহভাজন ৬জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত মূলহোতাদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সিক্স মার্ডারের রহস্য ও জড়িতদের গ্রেফতারে ইতিমধ্যেই র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদী হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তারা ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারেন, ৮/১০জনের একটি দল নিজেদের পুলিশের তাড়া খেয়ে গ্রেফতার এড়াতে আশ্রয় নেয়ার কথা বলে ওই বাড়ির দোতলায় পীর-দরবেশ দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুকের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। এরপর তারা সেকানে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে নিজেদের ডাকাত পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সবাইকে হাত-পা বেঁধে জিম্বি করে ৪জনকে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে তালা লাগিয়ে দিয়ে অপর দু’টি কক্ষে ৪জনকে পর্যায়ক্রমে জবাই করে হত্যা করে। এসময় তাদের ডাক-চিৎকারে দুর্বৃত্তরা দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে পালিয়ে যায়। তবে সার্বিক বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License