তফসিল পুনর্নির্ধারণ হলে নির্বাচনে সব দল গেলে আমিও যাব : এরশাদ

Friday, December 6, 2013

যুগান্তর: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনও অনড়। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার থেকে তার দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত বদলাননি। তিনি শুক্রবার রাতে বারিধারায় তার বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এরশাদ বলেন, সিদ্ধান্ত বদল মানেই মৃত্যু। তাই আমার আর সিদ্ধান্ত বদলের কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, আমার দলের কয়েকজন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের তফসিল আরও ১০ দিন পিছিয়ে পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। যদি তফসিল ১০ দিন পেছানো হয় এবং সব দল নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আমিও নির্বাচনে অংশ নেব। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, কারও সঙ্গে আমার কোনো টেলিকনফারেন্স হয়নি। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আমি। আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

এর আগে সকালে তিনি আরও এক দফা প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় তিনি তার আত্মহত্যার হুমকির বিষয়টি যেভাবে গণমাধ্যমে এসেছে তা ঠিক নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, র‌্যাব ও পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে তিনি আশংকা করছিলেন তার কাছ থেকে জোরপূর্বক কোনো বিবৃতি নেয়া হতে পারে। তাই বলেছিলেন, প্রয়োজনে নিজেই নিজেকে হত্যা করবেন। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার বিষয়টি জানিয়ে এরশাদ বলেন, যারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তাদের পদত্যাগপত্র বেগম রওশন এরশাদের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তার হাতে পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেবেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এখনও পদত্যাগপত্র জমা দেননি, তারা পদত্যাগ করবেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, তারা পদত্যাগ করবেন। আমার দলে কোনো বিভক্তি নেই। সবাই আমার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।

মঙ্গলবার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আত্মগোপনে যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। পরদিন বুধবার বিকালে নিজ বাসায় ফিরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর প্রেস ব্রিফিং করে সরকার ছাড়ার ঘোষণা, বৃহস্পতিবারের মধ্যে দলের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের পদত্যাগের নির্দেশ, বাড়ির সামনে র‌্যাব-পুলিশের অবস্থান, রাত সাড়ে ৭টার দিকে স্ত্রী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বেগম রওশন এরশাদসহ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ‘গ্রেফতারের চেষ্টা করলে আÍহত্যার হুমকি’ দিয়ে ঘুমাতে যান এরশাদ। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে উঠে দলের নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকদের খোঁজখবর নেন তিনি। বলেন, রাতে ভালো ঘুম হয়েছে। এরপর দিনভর দফায় দফায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

শুক্রবার বেলা ১১টায় আগের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে এরশাদ বলেন, আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড়। এই অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়ার কোনো পথ নেই। যতই চাপ আসুক আমি নির্বাচনে যাব না। এর আগে ভোরে আরও এক দফা নিচে নেমে আসেন এরশাদ। সাংবাদিকসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি। এরশাদ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা আজও আছ। কেন তোমরা রাত জেগে আমার জন্য কষ্ট করছ। কথা বলতে বলতে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্ক বাসভবনের প্রধান গেট দিয়ে বের হন তিনি। এরশাদকে দেখেই মাদুর বিছানো অবস্থায় ঘুমন্ত পুলিশ সদস্যরা চোখ-মুখ মুছে দাঁড়ান। এরশাদ মুচকি হেসে তাদের বলেন, তোমরা কষ্ট করে ডিউটি করছ, আমি কি পালিয়ে যাব! এক পুলিশ সদস্য বলেন, স্যার আপনি এদেশের সন্তান। পালাবেন কেন? এরশাদ বলেন, কি বলব সরকার মনে করছে আমি পালিয়ে যাব। অনেক বয়স হয়েছে। আমি আমার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাব না। পুলিশের আরেক সদস্য বলে উঠলেন, স্যার আমাদের কি করার আছে, উপর থেকে নির্দেশ। পরে এক এক করে সব নেতাকর্মীর ব্যক্তিগত খোঁজখবর নেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এ সময় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব নুরুল ইসলাম নুরুকে সøেহে বলেন, আমাকে কি বউমার বকা শোনাবে? কেন রাত জেগে কষ্ট করছ! এবার বাসায় যাও। এরপর বাসভবনের আশপাশ ঘুরে সব কর্মচারীর খোঁজখবর নিয়ে লিফট দিয়ে আবার বাসায় উঠে যান তিনি। ১১টার দিকে প্রেস ব্রিফিং শেষে জুমার নামাজ পড়তে প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে বের হন এরশাদ। এরপর বিকালে সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি ফজল শাহাবুদ্দিনকে দেখতে যান।

সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে : এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে এই তথ্য জানিয়ে বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পার্টি চেয়ারম্যানের নির্দেশে এভাবে জমা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দেশে ফিরে এলে তিনি পদত্যাগপত্র তার কাছে জমা দেবেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রুহুল আমিন হাওলাদার এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে আছি। সৌজন্য বজায় রেখে সরকার থেকে বের হতে চাই। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে, আলোচনা একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আশা করি একটা সমাধান হবে। এ সময় তিনি বলেন, আমি বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় যাচ্ছি। তার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করব এ বিষয়ে। সাংবদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আমরা একমত। তবে কখন কিভাবে সরকার থেকে বের হব সে বিষয়ে দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সরকার ও বিরোধী দলের কারণে দেশে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে আমাদের চেয়ারম্যান তার একটা স্থায়ী সমাধান চান। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ বাবলুর পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা দু’জন কালও এসেছেন। আজও আবার আসবেন। তারা পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে আমি আশা করছি। সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি চলছে- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরের জবাবে তিনি বলেন, দর কষাকষির মানে এই নয় যে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা কোনো কিছু করব। এ সময় অন্যদের মধ্যে জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, এসএম ফয়সল চিশতী, সোলায়মান আলম শেঠ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মীর আবদুর সবুর আসুদ, রিন্টু আনোয়ার, নুরুল ইসলাম নুরু উপস্থিত ছিলেন। – See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2013/12/07/47556#sthash.1EJOieIh.dpuf




Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License