মানবজমিন: দিনভর নিজের অবস্থানে অনড় থেকে রাতে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হলে তিনি নিজেই নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। এজন্য শিয়রের কাছে চারটি বুলেটসহ পিস্তল প্রস্তত রেখেছেন। গতকাল রাত সোয়া ১১টায় যখন এরশাদ সাংবাদিকদের সামনে এ বক্তব্য রাখছিলেন তখন তার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসা ঘিরে রেখেছিল আইন শৃঙঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। রাতের পোশাক পড়ে এরশাদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমার গায়ে হাত দিলে সারা দেশে আগুন জ্বলবে। আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটিই আমার জীবনের শেষ সিদ্ধান্ত। ইট ইজ মাই প্রমিজ। সব দল না এলে আমি নির্বাচনে যাবো না। এরশাদ যখন এসব কথা বলছিলেন তখন প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে অবস্থানরত নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছিলেন-এরশাদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। এরশাদ ভয় নাই রাজপথ ছাড়ি নাই। মঙ্গলবার হঠাৎ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি নয়া মেরুকরণের সূচনা করে এরশাদ প্রায় সাতাশ ঘণ্টা আত্মগোপনে থাকায় তাকে নিয়ে গতকাল দিনভর ছিল নানা গুজব। কিন্তু বিকালে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় ফিরে মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায় এরশাদের দৃঢ় অবস্থান। রাতে নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেন বৃহস্পতিবারই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হবে তাদের। প্রত্যাহার করতে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র। এরশাদের এ ঘোষণা দেয়ার পরই তার বাসা ঘিরে র্যাব পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য অবস্থান নেয়। এ থেকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে এরশাদ গ্রেপ্তার হতে পারেন। জাতীয় পার্টির লোকজনও এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এরশাদ বলেন, আমার নিজস্ব আদর্শ আছে। নিজস্ব রাজনীতির অধিকার আছে। যদি কেউ না আসে তবে নির্বাচন করবো না। এটাই আমার শেষ কথা। আমার সঙ্গে যদি চালাকি করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয় তাহলে আমার শিয়রের কাছে পিস্তলের চারটি গুলি প্রস্তত আছে। এই গুলিতে আমি নিজেই আত্মহত্যা করবো। তবু তোমাদের সঙ্গে যাবো না। আমৃত্যু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো। এটাই আমার জীবনের শেষ সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীেেগর সঙ্গে কেউ নাই। একশ মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখেন কেউ আওয়ামী লীগের কথা বলবে না। গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে করছেন, আমি নিজে করছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়োজনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত আছে। নির্বাচন থেকে সরে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি একাই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেউ বুুদ্ধি পরামর্শ দেয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৫ই ফেব্রুয়ারির মতো নির্বাচন হলে এর পরিণতিতো আপনারাই ভাল জানেন।
জেলে পচবো তবুও গণভবনে যাবো না
এর আগে সন্ধ্যায় সীমাহীন চাপেও অনড় অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে জেলে পচে মরবো, তবুও গণভবনে যাবো না। গতকাল সন্ধ্যায় একটি মহলের সদস্যরা তাকে গণভবনে গিয়ে সমঝোতা করার প্রস্তাব দেন। অন্যথায় তাকে কঠিন পরিণতি বরণের হুঁশিয়ারিও দেন। তখন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। মন্ত্রিসভার জাতীয় পার্টির সদস্যদের পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই এরশাদের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। তার বাসা অনেকটা ঘেরাও করে ফেলেন র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এদিকে, এরশাদের নির্দেশের পর আজই জাতীয় পার্টির মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। দলটির সংসদ সদস্য প্রার্থীরাও আজ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শুরু করবেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে এরশাদ বলেন, সব দল না এলে নির্বাচনে যাবে না জাতীয় পার্টি। এ নির্বাচনে যাবো না, না, না- এটাই আমার শেষ কথা। বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের প্রস্তাবও নাকচ করে দেন এরশাদ। তিনি বলেন, তারা বলেছেন আমি নির্বাচনে অংশ না নিলে জামায়াত-শিবির আসবে। আমি বলেছি, কারা আসবে তা আমার দেখার বিষয় নয়। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। আপনারা রাস্তায় যান। ১০০ মানুষকে জিজ্ঞেস করুন। একজন মানুষও প্রধানমন্ত্রীকে চান না। প্রায় ২৭ ঘণ্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে নিজ বাসায় ফেরেন এরশাদ। এ সময় প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে জাতীয় পার্টির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নেন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে আকস্মিকভাবে জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এরশাদ। এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল সকালে অবশ্য মানবজমিন-এর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি তার অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানান। পরে বিকালে সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সালমা ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও সন্ধ্যা ৭টায় জি এম কাদের ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেগম রওশন এরশাদ প্রেসিডেন্ট পার্কে যান। বৈঠক শেষে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, এবার আমি আর আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবো না। আমি আমার দলের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং উপদেষ্টাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করে চলে আসার নির্দেশ দিচ্ছি। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের নির্দেশ দিচ্ছি তোমরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নাও। তোমরা তোমাদের জীবন বিপন্ন করো না। সহিংসতা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এলাকায় যেতে পারি না। অন্য প্রার্থীরাও এলাকায় যেতে পারবেন না। নির্বাচনে অংশ নিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের পরামর্শ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা বলেছেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে, পরিবেশ ভাল হবে। আমি বলেছি, পরিবেশ আর ভাল হবে না। পরিবেশ আরও খারাপ হবে। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, আমার কোন কথা নেই। স্যার যা বলেছেন তাই আমাদের কথা। জি এম কাদেরও শিগগিরই এরশাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা জানান। এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় রাতে বলেন, স্যার গ্রেপ্তারকে ভয় পান না। সকালে সারা দেশে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তার আদেশে দলের দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ নির্দেশ দেন। এরশাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের আদেশক্রমে পার্টির সব প্রার্থীকে বুধবারের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক নেতা আবুল আহসান জুয়েল বলেন, টেলিফোনে এরশাদ দপ্তর সম্পাদককে এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
২৭ ঘণ্টা পর প্রকাশ্যে: মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের পর আকস্মিকভাবে অন্তর্ধান হন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নিজের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেন তিনি। তার দলের অনেক নেতাও তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তার এ অদৃশ্য অবস্থান বিপুল রহস্যের জন্ম দিয়েছিল। সব রহস্য আর ধূম্রজালের অবসান ঘটিয়ে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে তিনি বনানীর প্রেসিডেন্ট পার্কের বাড়িতে প্রবেশ করেন। ঢাকা-শ-৪৬৯ নম্বর গাড়িতে করে তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে বাসায় পৌঁছান। আগেই কয়েক শ’ নেতাকর্মী তার বাসার সামনে ভিড় করেন। তারা এরশাদের নামে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘এরশাদের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’- এমন স্লোগান দেন তারা। এর কিছুক্ষণ আগেই জাতীয় পার্টির নেতা রুহুল আমীন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য সেখানে উপস্থিত হন। রুহুল আমীন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
র্যাব-পুলিশের ঘেরাওয়ে প্রেসিডেন্ট পার্ক: প্রেসিডেন্ট পার্ক অনেকটা ঘেরাও করে রেখেছেন র্যাব-পুলিশের সদস্যরা। বিকাল ৫টার পর থেকেই বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে, পেছনে বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ দেখা যায়। বিকালে এরশাদের ঘোষণার পরই সেখানে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা চলে যান। তার পর থেকেই বাড়তে থাকে পুলিশ। সন্ধ্যার পর র্যাব ১-এর কমান্ডার লে. কর্নেল কিসমত হায়াত প্রবেশ করেন এরশাদের কক্ষে। তিনি আধঘণ্টা আলাপ করেন এরশাদের সঙ্গে। তারপর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গৃহবন্দি নন। তার নিরাপত্তার স্বার্থে বাসার চারপাশে অতিরিক্ত ফোর্স আনা হয়েছে। এরশাদকে মানসিক চাপে ফেলার উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এরশাদের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। তিনি আমাদের উপস্থিতিতে সন্তুষ্ট। এটি কূটনৈতিক জোন হওয়ায় এর নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের বেশি সচেতন থাকতে হচ্ছে। এখানে কোন ধরনের নাশকতা হলে আমাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। তাই আমরা বাড়তি সতর্ক অবস্থায় আছি। এখানে অনেক নেতাকর্মী জড়ো হচ্ছেন। এতে আমরা নাশকতার আশঙ্কা করছি।
জেলে পচবো তবুও গণভবনে যাবো না
এর আগে সন্ধ্যায় সীমাহীন চাপেও অনড় অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে জেলে পচে মরবো, তবুও গণভবনে যাবো না। গতকাল সন্ধ্যায় একটি মহলের সদস্যরা তাকে গণভবনে গিয়ে সমঝোতা করার প্রস্তাব দেন। অন্যথায় তাকে কঠিন পরিণতি বরণের হুঁশিয়ারিও দেন। তখন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। মন্ত্রিসভার জাতীয় পার্টির সদস্যদের পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই এরশাদের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। তার বাসা অনেকটা ঘেরাও করে ফেলেন র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এদিকে, এরশাদের নির্দেশের পর আজই জাতীয় পার্টির মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। দলটির সংসদ সদস্য প্রার্থীরাও আজ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শুরু করবেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে এরশাদ বলেন, সব দল না এলে নির্বাচনে যাবে না জাতীয় পার্টি। এ নির্বাচনে যাবো না, না, না- এটাই আমার শেষ কথা। বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের প্রস্তাবও নাকচ করে দেন এরশাদ। তিনি বলেন, তারা বলেছেন আমি নির্বাচনে অংশ না নিলে জামায়াত-শিবির আসবে। আমি বলেছি, কারা আসবে তা আমার দেখার বিষয় নয়। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। আপনারা রাস্তায় যান। ১০০ মানুষকে জিজ্ঞেস করুন। একজন মানুষও প্রধানমন্ত্রীকে চান না। প্রায় ২৭ ঘণ্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে নিজ বাসায় ফেরেন এরশাদ। এ সময় প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে জাতীয় পার্টির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নেন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে আকস্মিকভাবে জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এরশাদ। এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল সকালে অবশ্য মানবজমিন-এর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি তার অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানান। পরে বিকালে সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সালমা ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও সন্ধ্যা ৭টায় জি এম কাদের ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেগম রওশন এরশাদ প্রেসিডেন্ট পার্কে যান। বৈঠক শেষে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, এবার আমি আর আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবো না। আমি আমার দলের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং উপদেষ্টাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করে চলে আসার নির্দেশ দিচ্ছি। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের নির্দেশ দিচ্ছি তোমরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নাও। তোমরা তোমাদের জীবন বিপন্ন করো না। সহিংসতা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এলাকায় যেতে পারি না। অন্য প্রার্থীরাও এলাকায় যেতে পারবেন না। নির্বাচনে অংশ নিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের পরামর্শ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা বলেছেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে, পরিবেশ ভাল হবে। আমি বলেছি, পরিবেশ আর ভাল হবে না। পরিবেশ আরও খারাপ হবে। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, আমার কোন কথা নেই। স্যার যা বলেছেন তাই আমাদের কথা। জি এম কাদেরও শিগগিরই এরশাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা জানান। এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় রাতে বলেন, স্যার গ্রেপ্তারকে ভয় পান না। সকালে সারা দেশে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তার আদেশে দলের দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ নির্দেশ দেন। এরশাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের আদেশক্রমে পার্টির সব প্রার্থীকে বুধবারের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক নেতা আবুল আহসান জুয়েল বলেন, টেলিফোনে এরশাদ দপ্তর সম্পাদককে এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
২৭ ঘণ্টা পর প্রকাশ্যে: মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের পর আকস্মিকভাবে অন্তর্ধান হন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নিজের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেন তিনি। তার দলের অনেক নেতাও তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তার এ অদৃশ্য অবস্থান বিপুল রহস্যের জন্ম দিয়েছিল। সব রহস্য আর ধূম্রজালের অবসান ঘটিয়ে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে তিনি বনানীর প্রেসিডেন্ট পার্কের বাড়িতে প্রবেশ করেন। ঢাকা-শ-৪৬৯ নম্বর গাড়িতে করে তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে বাসায় পৌঁছান। আগেই কয়েক শ’ নেতাকর্মী তার বাসার সামনে ভিড় করেন। তারা এরশাদের নামে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘এরশাদের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’- এমন স্লোগান দেন তারা। এর কিছুক্ষণ আগেই জাতীয় পার্টির নেতা রুহুল আমীন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য সেখানে উপস্থিত হন। রুহুল আমীন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
র্যাব-পুলিশের ঘেরাওয়ে প্রেসিডেন্ট পার্ক: প্রেসিডেন্ট পার্ক অনেকটা ঘেরাও করে রেখেছেন র্যাব-পুলিশের সদস্যরা। বিকাল ৫টার পর থেকেই বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে, পেছনে বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ দেখা যায়। বিকালে এরশাদের ঘোষণার পরই সেখানে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা চলে যান। তার পর থেকেই বাড়তে থাকে পুলিশ। সন্ধ্যার পর র্যাব ১-এর কমান্ডার লে. কর্নেল কিসমত হায়াত প্রবেশ করেন এরশাদের কক্ষে। তিনি আধঘণ্টা আলাপ করেন এরশাদের সঙ্গে। তারপর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গৃহবন্দি নন। তার নিরাপত্তার স্বার্থে বাসার চারপাশে অতিরিক্ত ফোর্স আনা হয়েছে। এরশাদকে মানসিক চাপে ফেলার উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এরশাদের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। তিনি আমাদের উপস্থিতিতে সন্তুষ্ট। এটি কূটনৈতিক জোন হওয়ায় এর নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের বেশি সচেতন থাকতে হচ্ছে। এখানে কোন ধরনের নাশকতা হলে আমাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। তাই আমরা বাড়তি সতর্ক অবস্থায় আছি। এখানে অনেক নেতাকর্মী জড়ো হচ্ছেন। এতে আমরা নাশকতার আশঙ্কা করছি।
No comments:
Post a Comment