সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সংবাদ সম্মেলন:তথ্য বিকৃতি ও মিথ্যাচারের দায়ে আদালতে অভিযুক্ত রাম কানাই দাসের নাম একুশে পদক তালিকা থেকে প্রত্যাহারের দাবী

Monday, February 17, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম:

তথ্য বিকৃতি ও মিথ্যাচারের দায়ে আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত রামকানাই দাসের নাম একুশে পদক তালিকা থেকে প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানিয়েছেন সিলেটের নেতৃস’ানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সিলেট বিভাগীয় কমিটি আয়োজিত সিলেটে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবী জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী জামাল উদ্দিন হাসান বান্না।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, বাঙালীজাতির মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী দেশ মাতৃকায় যেসব কৃতি সন্তান জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, যাদেরকে অনুসরণ করে নতুন প্রজন্ম সঠিক জীবনের সন্ধান পায় রাষ্ট্র তাদেরকে সম্মানিত করে। এই রাষ্ট্রীয় সম্মাননার একটি হচ্ছে একুশে পদক, যা আমাদের অসি-ত্বের প্রতীক মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতির স্মারক। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে একুশে পদক প্রদান করা হয়। এবারে প্রখ্যাত সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার সহ একুশে পদকের জন্য ১৫ জনের নাম নির্বাচিত হয়েছে। এতে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। কিন’ এই নামের তালিকায় শিল্পকলায় আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত বিতর্কিত ব্যক্তি রামকানাই দাসের নাম দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। সম্মানিত ব্যক্তিদের তালিকায় ধূর্ত এই ব্যক্তির নাম অন-র্ভুক্তির হওয়ায় আমরা ব্যথিত হয়েছি। এই ব্যক্তির নামটি তালিকাকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব গুণাবলী দরকার সেসব রাম কানাই দাসের মধ্যে নেই। তিনি আদর্শ ও সততাকে লালন করতে পারেননি। যার জন্য দেশের অন্যতম শীর্ষস’ানীয় লোক সংগীত শিল্পী, সুরকার ও সংগীত গুরু বিদিত লাল দাস তার জীবদ্দশায় রাম কানাই দাসের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য সংযোজনের দায়ে সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন এবং রামকানাই দাস রচিত সংগীত ও আমার জীবন নামক গ্রনে’র প্রচার প্রকাশনা নিষিদ্ধ চেয়ে আবেদন জানান। ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর ঘোষিত এই মামলার রায়ে সিলেটের বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ নাজিয়া নাহিদ রামকানাই দাসের বইটির চলতি প্রকাশনা নিষিদ্ধ করেন। বিচারক আরো নির্দেশ দেন বইটির পুন:মুদ্রনের সময় বিদিত লাল দাসের আপত্তিকৃত অংশ বাদ দিয়ে প্রকাশনা করতে হবে। রামকানাই দাস তার বইয়ে নির্লজ্জভাবে নিজেকে জাহির করতে গিয়ে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করেছেন। সংগীতের সাথে সম্পৃক্ত কোন মানুষ এভাবে তথ্য বিকৃতি ঘটাতে পারে, মিথ্যাচার করতে পারে- এমনটা আমরা বিশ্বাস করতে পারিনা। অথচ যে রামকানাই দাস নিজেকে পন্ডিত দাবী করেন সেই তিনি অবলীলায় জঘন্যভাবে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়ে তার ‘সংগীত ও আমার জীবন’ গ্রন’টি বাজারজাত করে সংস্কৃতি জগতকে কলংকিত করেছেন।

রামকানাই দাস দাবী করেছেন, তিনি নাকি ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন দেশে গড়ে উঠা ‘বিদিত লাল দাস ও তার দল’নামের লোক সংগীত বিষয়ক সংগঠনের সংগীত পরিচালক ছিলেন। অথচ ঐ দলে সংগীত পরিচালক বলে কোন পদই ছিল না। তিনি মূলত ঢোল বাজতেন। দলে তার অবস’ানও দীর্ঘদিনের ছিল না।

রামকানাই দাস তার অ্যালবামে দাবী করেছেন, ‘বিনোদিনী গো তোর বৃন্দাবন কারে দিয়া যাবি’ গানটি নাকি তার বাবা রসিক লাল দাসের লেখা। অথচ সংগীত জগতের এতটুকুন খবর যারা রাখেন তারা জানেন, এ গানটির রচয়িতা মরমী সাধক রাধা রমন দত্ত।

দেশে-বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’। গানটি প্রখ্যাত শিল্পী হিমাংশু গোস্বামীর সংগ্রহ করা। সংগৃহিত গানের সুরও সংগৃহিত থাকে। তবে এ গানটিকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করতে অন-রা সংযোজন করেন গীতিকার গিয়াস উদ্দিন আহমদ। গানটির মূল সুর ঠিক রেখে আধুনিকয়নের কাজটি করেন বিদিত লাল দাস। অথচ রামকানাই দাস দাবী করেছেন, তিনি নাকি গানটির সুরকার। কত বড় মিথ্যাচার তিনি করেছেন।

সার্ক সম্মেলনে বিদিত লাল দাস ও তার দল ‘আল্লার নাম লইয়ারে নবীর নাম লইয়ারে’ শিরোনামের যে গানটি পরিবেশন করেন সেটা লিখেছিলেন গিয়াস উদ্দিন আহমদ আর সুর দিয়েছিলেন বিদিত লাল দাস। সার্ক সম্মেলনে সংগীত পরিচালনা করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সংগীত পরিচালক আহমদ ইমতিয়াজ বুলবুল। অথচ রামকানাই দাস দাবী করেছেন তিনি নাকি ছিলেন সংগীত পরিচালক। নিজেকে জাহির করার কি উন্মত্ততা।

রামকানাই দাস নাকি পন্ডিত, কিন’ তার নিশ্চয়ই জানা আছে যে, ভারতের এলাহাবাদ থেকেই কেবল এ উপাধি দেয়া হয়। এই উপাধি অর্জনের জন্য যে যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন আর যে কঠোর সাধনা দরকার রামকানাই দাস তার ধারে কাছেও যেতে পারেননি। অথচ দিব্যি তিনি নিজেকে পন্ডিত দাবি করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায় করছেন।

রামকানাই দাস কেবল তথ্য বিকৃতির মাধ্যমেই অসততার পরিচয় দেননি, তিনি সংগীত পরিষদের নামেও দীর্ঘদিন প্রতারণা করেছেন। সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টা এলাকায় সংগীত পরিষদ নামের একটি সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল পরিচালনায় রামকানাই দাস। অথচ তিনি বছরে বেশিরভাগ সময়ই থাকেন আমেরিকায়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখানে গান শিখতে এসে প্রতারিত হয়েছে। যে ব্যক্তি এভাবে তথ্য বিকৃতি ঘটায়, মিথ্যাচার করে, পন্ডিত বলে ভূয়া পরিচয় দেয় তার হাতে একুশে পদকের মতো সম্মানা উঠলে এই রাষ্ট্রীয় সম্মাননার চরম অবমাননা হবে বলে আমরা মনে করি। তাই আমরা এবারের একুশে পদক তালিকা থেকে রামকানাই দাসের নাম বাদ দেয়ার জন্য সংশিৱষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নেতৃবৃন্দ জোরদাবী জানিয়ে আগামী দিনে সকল প্রকার সম্মাননা ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকার জন্য সংশিৱষ্টদের প্রতি তারা আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী হিমাংশু গোস্বামী। অন্যান্যের মধ্যে উপসি’ত ছিলেন বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট-এর সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সেলিম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট-এর পরিচালক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সিলেট বিভাগীয় কমিটির সহ-সভাপতি প্রিন্স সদরুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্রদাস ভট্টাচার্য, এম আহমদ আলী, নির্বাহী সদস্য তুহিন আহমেদ ও সংগীত শিল্পী বিদিত লাল দাস এর পুত্র বিশ্বদীপ লাল দাস বাসু প্রমুখ।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License