মানবজিমন: রাজশাহীতে সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষোভকারীর ওপর চড়াও পুলিশ স্টাফ রিপোর্টার: টানা অবরোধের দ্বিতীয় দিনও অগ্নিগর্ভ ছিল দেশ। অবরোধ ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে-গঞ্জে, পথে পথে। সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল রাজধানী। প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গোটা দেশ। বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও সরকারি দলের কর্মীদের সংঘর্ষ ও সহিংসতায় অন্তত ১০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শ’ শ’ নেতাকর্মী। সারাদেশে গণগ্রেপ্তার চালিয়েছে পুলিশ। অবরোধে পুলিশের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে প্রাণহানির ঘটনায় ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ২৩ ঘণ্টা বাড়িয়েছে বিরোধী জোট। শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত পালিত হবে অবরোধ। দ্বিতীয় দিনেও দেশজুড়ে রেললাইনে ব্যাপক নাশকতা চালানো হয়। পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধী নেতাকর্মীদের বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, নরসিংদীসহ অন্তত ২০ জেলায়। সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে চট্টগ্রামে এক যুবদল নেতাসহ ২ জন, সাতক্ষীরায় জামায়াত নেতাসহ ২ জন, সিরাজগঞ্জে জামায়াত ও ছাত্রদলের ২ জন ও গাজীপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও যশোরে জামায়াত নেতা নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ রাতে ককটেল বিস্ফোরণে চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া মঙ্গলবার রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণে আহত আনোয়ারা বেগম গতকাল হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে থেমে থেমে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর আসছিল। গভীর রাতে রাজধানীর টিকাটুলিতে বাসে দুর্বৃত্তদের ককটেল নিক্ষেপে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে। রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর চট্টগ্রামস্থ মেহেদীবাগের বাসায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। যদিও এ সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। অন্যদিকে রাত ১১টায় বরিশালে গ্যাস সিলিণ্ডার বহনকারী গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। রেললাইন উৎপাটন, অগ্নিসংযোগ ও বগি লাইনচ্যুতের ঘটনা ঘটেছে জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, নেত্রকোনায়। নৌপথ অবরোধের ঘটনা ঘটেছে বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ফুলপুর ও যশোরের অভয়নগরে। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় চট্টগ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও। রেললাইন উপড়ে রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে অবরোধকারীরা। বন্ধ ছিল রাজধানীর সঙ্গে দূরপাল্লার বাস চলাচল। বিএনপি দাবি করেছে- ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে সারাদেশে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে নিহত হয়েছে যুবদল, ছাত্রদল, জামায়াতের ৫ নেতাকর্মী। নিহতরা হলেন- চট্টগ্রামের কর্নেলহাটে যুবদল কর্মী আবদুল হান্নান, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা ছাত্রদল নেতা মাসুম বিল্লাহ, জামায়াত নেতা আবদুল জলিল, বগুড়ায় ২১নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউছুফ হোসেন, সাতক্ষীরায় জামায়াত নেতা শামসুর রহমান। অবরোধের সমর্থনে মিছিল করার সময় পুলিশের গুলিতে রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপি নেতা জান্নাতুল ফেরদৌস, নারায়ণগঞ্জের শহর যুবদলের সভাপতি মাকসুল আলম খন্দকার, সোনারগাঁও উপজেলায় শ্রমিক দল সভাপতি আব্দুর রহিম, যুবদল সমপাদক আব্দুর রউফ, গাজীপুর জেলা জাসাসের সভাপতি সোহেল, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ছাত্রদল সম্পাদক ফয়জুল ইসলামসহ সারা দেশে ১২০০ জনের অধিক নেতা আহত হয়েছেন। এছাড়া অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর দুই ভাই কাইমুল হক রিংকু, জহিরুল হক, গাজীপুর জেলা জাসাসের সম্পাদক ইঞ্জি. ইদ্রিস খান, মাদারীপুর জেলা সমবায় দলের সভাপতি ডা. কাওছার হাওলাদার, নাটোরের বড়াইগ্রামের পৌর বিএনপি’র সহ-সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, সাভার পৌর যুবদলের যুগ্ম সমপাদক আজহার, ডিসিসির সাবেক সাবেক কমিশনার সিরাজুল হোসেনের ভাই জামাল হোসেন, কোতোয়ালি থানা যুবদলের সভাপতি রিয়াজ, ঢাকার ১১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হান্নান, রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় কাউন্সিলার নীলচাঁদ আহমেদ, সাতক্ষীরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফসহ সারাদেশে বিরোধীদলীয় ৪৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে রাজধানীর রামপুরায় জাসাস নেতা জাকির হোসেন ও রিয়াদকে ৩ মাস, পল্লবীতে যুবদল নেতা রোকন মিয়াকে ৬ মাস, খুলনায় যুবদল নেতা মনির হোসেন টিটুকে ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অবরোধে সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনায় দ্রুত বিচারসহ নানা আইনে সাভারে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, খুলনায় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নুরুল ইসলাম মনিসহ ৭০০, রাজধানীর উত্তরা-দক্ষিণখান ও বিমানবন্দরে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও কিশোরগঞ্জে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহসহ ৩০০ জন এবং সারাদেশে ৫ হাজারের বেশি বিরোধী নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এছাড়া অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র চট্টগ্রামে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের বাসা, বিএনপি’র সহ-কৃষি বিষয়ক সমপাদক ও কুমিল?া দক্ষিণ জেলা সমপাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসিন, কুমিল?া সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, সাতক্ষীরা জেলা সমপাদক ইফতেখার আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক তাসকিন আহমেদ চিশতীর বাসভবনে বিজিবি-পুলিশ-র্যাব তল?াশি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান খানকে ধনু-নদীর পাড়ে অবরুদ্ধ করে রাখে যৌথ বাহিনী। বিএনপির দাবি- অবরোধের প্রথম দুইদিনে ৮ জন নিহত, ২৩০০ জন আহত, ৮৫০ জন গ্রেপ্তার, ৯ হাজার আসামি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। এদিকে নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি অলিগলিতে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক র্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের। মঙ্গলবার রাতভর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে টহল দিয়েছে বিজিবি। জলকামান ও রায়ট কার নিয়ে পুলিশ টহল দেয় রাজপথে। আতঙ্কিত মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হননি।
রাজধানীর চিত্র: অবরোধের দ্বিতীয় দিনও রাজধানীজুড়ে ঝটিকা মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বাড্ডা এলাকায় দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুরান ঢাকা, উত্তরা ও শান্তিনগর এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। একাধিক স্থানে পুলিশ গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তবে ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে খিলগাঁও থানায় ২ জন, আদাবর ২ জন, শেরেবাংলানগর ৩ জন ও পল্লবী থানায় ১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানী থেকে কোন দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি। লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল করলেও সিডিউল পরিবর্তন হয়েছে। দূরের যাত্রীর পাশাপাশি রাজধানীর মধ্যেও গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বাড্ডার প্রগতি সরণিতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শিবিরের ঝটিকা মিছিল থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে হামলা চালানো হয়। তারা পিকআপ ভ্যানের ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। এসময় পিকআপ ভ্যানে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। ভ্যানে থাকা পুলিশের এএসআই লোকমান ও কনস্টেবল আজিজকে পিটিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। পরে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। চানখারপুল এলাকায় বিকাল পাঁচটার দিকে পরপর ৬-৭টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়েজ (২৮) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। সকাল ৬টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় ঝটিকা মিছিল থেকে অন্তত ১০ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মিছিলকারীরা রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া করে মিছিলকারীদের সরিয়ে দেয়। প্রায় একই সময় মিরপুর-১১ কালশী রোডে বাইশতলা গার্মেন্টের সামনে তিনটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় অবিস্ফোরিত দুটি হাতবোমাসহ একজনকে আটক করে পুলিশ। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে অবরোধকারীরা কল্যাণপুরে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
সকাল ৭টার দিকে মুগদা পাড়া এলাকায় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয় দুবৃর্ত্তরা। সকালে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণে পুলিশের এএসআই শাহে আলম আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে নয়াবাজার এলাকায় মিছিল থেকে ১০-১২টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ ফাঁকা গুলি করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল ১১টার দিকে বাবু বাজার ব্রিজের গোড়ায় ৪টি, লক্ষ্মীবাজার মহিলা কলেজ রোডে ৩টি ও সিদ্দিক বাজারে ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। দুপুর ১২টায় মিটফোর্ড এলাকায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। দুপুরে ধালাইখাল এলাকায় মিছিল করার চেষ্টার সময় কোতোয়ালি থানা যুবদল সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক রিয়াজ ও ৭২ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতা নান্নু মিয়াকে আটক করে পুলিশ। সকাল ৭টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার বিজি প্রেসের গলিতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন ওরফে সৌকত (২৮) ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম (২৯)কে গ্রেপ্তার করেছে। বিকাল ৪টার দিকে নয়াপল্টনের আনন্দ ভবনের সামনে থেকে চারজনকে আটক করে পল্টন থানা পুলিশ। সকাল ৮টার দিকে ধানমন্ডিতে মিছিল করার সময় হেলাল ও শোভন নামে দুই শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল ১১টার দিকে উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে ককটেল বিস্ফোরণের সময় আল আমিন নামে এক যুবককে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এয়ারপোর্ট হাজী ক্যাম্পের সামনে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় পিকেটাররা অগ্নিসংযোগ করলে তিনটি গাড়ি আংশিক পুড়ে যায়। সহিংসতায় উভয় দলের ৮জন কর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। দুপুর ১টার দিকে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় পিকেটাররা। দুপুর দেড়টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে চারটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। একই সময় পল্টন মোড়ে একাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় পিকেটাররা। প্রায় একই সময় শান্তিনগর এলাকায় চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ও একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় আগুন দেয়া হয়। বিকাল ৩টার দিকে তালতলা এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের সময় একজনকে আটক করে পুলিশ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে নয়াপল্টনের বিএপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বিকাল ৪টার দিকে রাজধানীর পান্থপথে র্যাবের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বত্তরা। এসময় তারা একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত ৯টায় মোহাম্মদপুর ও শ্যামলীতে ৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে একজন আহত হন।
আজও অবরোধ, শুক্রবার গায়েবানা জানাজা: নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১৮দল ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে ২৩ ঘণ্টা। শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিরোধী জোট। অবরোধের দ্বিতীয় দিন সারাদেশের অবরোধ পরিস্থিতি তুলে ধরতে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ প্রথমে ১২ ঘণ্টা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। রাতে ফের সংবাদ সম্মেলন করে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি। এছাড়াও অবরোধে পুলিশের গুলিতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় আগামীকাল বাদ জুমা সারাদেশে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচিও দিয়েছে ১৮দল। সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের বদলে দেশে এখন চলছে ইচ্ছাতন্ত্র। ইচ্ছাতন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিতে নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ বরকন্দাজের ভূমিকা পালন করছে। এখানে সরকারের কাছে জনগণ, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ, বিদ্বজ্জন কেউই বিবেচ্য নয়। একটি অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও সকলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের তাগিদ আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন। বরং একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে জনমতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দেশকে অস্থিতিশীল, সংঘাত ও অশান্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। রাজনৈতিক সমঝোতার আগেই তফসিল ঘোষণায় সারাদেশে প্রতিরোধ প্রতিবাদের দাবানল জ্বলে উঠেছে। বর্তমান সরকার ও আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনই শতভাগ দায়ী। ফলে এখন দেশের রাজনৈতিক সংকট একটি উপসংহারহীন অবস্থার দিকে টেনে নিয়ে যাবে। রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হবে। যদি তাই হয়, তাহলে তিনি সমঝোতার অপেক্ষা না করে কিভাবে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে কেন এত তাড়াহুড়ো করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলেন। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের অদূরদর্শী তফসিল ঘোষণায় এ কথা কি প্রমাণ হয় না যে, তারা কার ইচ্ছাধীন? বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় না নিয়ে নির্বাচন কমিশন জেনে শুনেই দেশকে এক গভীর সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। রিজভী বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তারই ঘোষিত রায় থেকে সরে গিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেছিলেন। জনগণের বুঝতে বাকি নেই, কার ইচ্ছায় প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিকে বেআইনিভাবে বিরোধী দল দমানোর জন্য নিষ্ঠুরভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। এদের আশ্রয়ে থাকা যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দেয়া হয়েছে লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র। যা দিয়ে তারা দেশব্যাপী সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে নিরস্ত্র বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, ভাঙচুর, লূটপাট, অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে। অবরোধের দ্বিতীয় দিনে অতি উৎসাহী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী র্যাব-পুলিশ-বিজিবি ঢাকাসহ সারাদেশে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। গুলি, টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ এবং রাবার বুলেট চালিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে গায়ের জোরে রক্তাক্ত পন্থায় দমন করার জন্য তাদেরকে কাজে লাগানো হচ্ছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা অতর্কিতে বোমা হামলা চালিয়ে গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিককে আহত করেছে। এই হামলা সরকারের মদদপুষ্ট দুর্বৃত্তদের ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত কাজ।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি’র সঙ্গে সংঘর্ষে এক জামায়াত কর্মী ও গাছ চাপা পড়ে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোর ৪টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামে গতকাল বেলা ১২টার দিকে কলারোয়া উপজেলার গোপিনাথপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে অবরোধের দুই দিনে সাতক্ষীরায় ৪ জনের মৃত্যু হলো। নিহত জামায়াত কর্মীর নাম ছামছুর রহমান (৪০)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শেয়ালডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মাজেদের ছেলে। নিহত গৃহবধূর নাম আম্বিয়া খাতুন। তিনি কলারোয়া উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের হারুন সরদারের স্ত্রী। গ্রামবাসীরা জানান, গতকাল ভোরে কয়েক শ’ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা আসামি ধরতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি এলাকায় গেলে জামায়াত-শিবির সমর্থকরা মাইকিং করে কয়েক হাজার লোক জড়ো করে। এ সময় তারা যৌথ বাহিনীর ওপর ককটেল, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারা যৌথ বাহিনীর সদস্যদেরকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। এ সময় পুলিশ ১৫০ রাউন্ড টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়। গুলিতে জামায়াত কর্মী ছামছুর রহমান নিহত হন। গুলিতে আহত হয় বেশ কয়েক জন জামায়াত কর্মী। অপরদিকে গতকাল বেলা ১২টার দিকে সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের কলারোয়া উপজেলার গোপিনাথপুর মোড়ে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে। গাছের ডাল মাথায় পড়ে আম্বিয়া খাতুন নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। এদিকে, বিক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবির কর্মীরা এ সময় উক্ত এলাকার সদরের আবাদের হাট বাজারে আওয়ামী লীগের কর্মী কার্তিক সাধু, নুর ইসলাম, শাহ আলমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাপস আচার্য্য ও গোপাল ঘোষালসহ ৫ আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা-কর্মীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বেলকুচিতে বিএনপি-জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের চতুর্মুখী সংঘর্ষে জামায়াত ও ছাত্রদলের ২ নেতাকর্মী নিহত ও গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয় জামায়াতকর্মী ধুকুরিয়াবেড়া গ্রামের আব্দুল জলিল (৫৫) এবং একই এলাকার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক মাছুম বিল্লাহ (২২)। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ ও দলীয় নেতারা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি মুকন্দগাতি বাজার এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এসময় তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে আব্দুল জলিল ও মাছুম বিল্লাহ মারা যায়। সংবাদ পেয়ে ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জামায়াতকর্মী আব্দুল হালিমকে এনায়েতপুর খাজা ইউনূস আলী মেমোরিয়াল হসপিটাল, বেলকুচি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়াকে সিরাজগঞ্জ সদর ও জামায়াতকর্মী মনিরুল ইসলামকে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যদের উল্লিখিত হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহম্মেদ দাবি করেছেন সংঘর্ষে ৩ জন নেতাকর্মী নিহত ও অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন জানান, চতুর্মুখী সংঘর্ষ চলাকালে উভয় দলের নেতাকর্মীদের গুলিতে ওই ২ জন নিহত ও অন্যরা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলেও চাইনিজ রাইফেল ব্যবহার করেনি।
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ও কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অবরোধের দ্বিতীয় দিনে গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য কামাল হোসেন (৩০) নিহত হয়েছেন। এ সময় ৫ জন আহত হন। স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর মোড়ে বিএনপি নেতা বাবলু, মোফাজ্জল, রিপন ও সাকিলের নেতৃত্বে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ১৮ দলের অবরোধ প্রতিরোধ করতে গেলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। বিএনপির হামলায় জামালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জামালপুর ইউপি ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার কামাল হোসেন, জামালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জোনায়েদ খন্দকার ও যুবলীগ নেতা সাখাওয়াৎ হোসেনসহ ৫ গুরুতর আহত হন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডা. কামাল মেম্বারকে মৃত ঘোষণা করেন। কর্তব্যরত ডা. মাসুদ রানা জানান, কামাল হোসেনের বাম হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। অন্য আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আহত জোনায়েদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা কামালের মৃত্যুর খবরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় দোলান বাজারে কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। পরে পলাশ উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, অবরোধের ২য় দিনে গতকাল পটিয়া আনোয়ারা পিএবি সড়কের ফকিরনিরহাট এলাকায় অবরোধকারীদের দেখে টেম্পো নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় টেম্পো উল্টে চালক এরশাদ (৩৫) নিহত হন। এরশাদের বাড়ি পটিয়া উপজেলার ১৫ নং ছনহরা ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডের চাটরা গ্রামে বলে জানা গেছে। এরশাদ সকাল ১০টায় পটিয়া থেকে টেম্পো নিয়ে আনোয়ারা যাওয়ার পথে ফকিরনিরহাট পৌঁছলে অবরোধকারীদের ধাওয়ার ভয়ে টেম্পো ঘুরিয়ে পালানোর সময় টেম্পোর নিচে চাপা পড়লে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু ঘটে। পটিয়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়ে। এদিকে অবরোধে পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম অচল হয়ে যায়। বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় যানবাহন চলেনি।
যশোরে জামায়াত নেতা খুন, হরতাল আজ
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, যশোরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আব্দুল হাই সিদ্দিকী বুলবুল নামে একজন জামায়াত নেতা নিহত হয়েছেন। গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে যশোর উপশহর ৭ নম্বর সেক্টরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত বুলবুল পেশায় একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি উপশহর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাস্টার নুরুন্নবী এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগের স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে দায়ী করেছেন। এদিকে এই হত্যার প্রতিবাদে জেলা জামায়াত আজ যশোর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। একই সঙ্গে রাতেই শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত। নিহতের স্বজনরা জানান, অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে সন্ধ্যায় উপশহর ৭ নম্বর সেক্টরের নিজ বাড়ির সামনের একটি সাইবার ক্যাফেতে বসে বুলবুল কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। এমন সময় মোটর সাইকেলযোগে ৩-৪ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ওই দোকানে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে বুলবুলকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এসময় বুলবুল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় বুলবুলকে দ্রুত উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বুলবুলের মৃত্যুর খবরে গোটা শহরে ব্যাপক উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে জামায়াতের নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ করে। এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার জেলা জামায়াত যশোর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, রাতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ককটেল বিস্ফোরণে একজন মারা গেছেন। তার নাম মো. শাহেদ (২০)। তিনি উপজেলার ঠাকুরদিঘী এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় নিহতের মা-ও গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কয়েকজন যাত্রী নিয়ে টমটমটি ঠাকুরদিঘী যাচ্ছিল। রাস্তায় ১০-১৫ জনের একটি দল হঠাৎ গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে শাহেদের শরীর ঝলসে যায়। তাকে প্রথমে সাতকানিয়া হাসপাতালে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে রাতে বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। মেহেদীবাগের ওই বাসায় তল্লাশি চালানোর সময় আমির খসরু বাসায় ছিলেন না।
অবরোধ পথে পথে: দ্বিতীয় দিনে নিহত ১১, সময় বাড়লো ২৩ ঘণ্টা
Wednesday, November 27, 2013
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment