নতুন বার্তা,ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে বাস পোড়ানোর অভিযোগে সরকারের মামলা দায়েরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি করে বলেছেন, “স্বৈরশাসকের পথ বেছে নেবেন না। তাহলে এর পরিণতি হবে স্বৈরশাসকদের মতোই।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় দলের সহ দফতর সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ জনির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ড. মাসুদসহ ১৮ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে গাড়ি পুড়ানোয় উসকানি দেয়ার দায়ে মামলা দায়েরের প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান বিরোধীদলীয় নেতা।
খালেদা জিয়া বলেন, “দেশের অবস্থা বিস্ফোরণোম্মুখ। একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়ে সরকার দেশকে চরম অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, “সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বান তারা (সরকার) বারবার উপেক্ষা কিংবা চাতুর্যের সঙ্গে এড়িয়ে যাচ্ছে। আর তড়িঘড়ি করে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে আগুনে ঘি ঢেলেছে বশংবদ নির্বাচন কমিশন।”
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “এর বিরুদ্ধে জনগণ শান্তিপুর্ণভাবে আন্দোলন ও প্রতিবাদ শুরু করলে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা ও দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মাঠে নামিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতপূর্ণ করে তুলেছে।”
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, “সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে, অথচ থানায় বোমা আক্রমণ, গাড়ি পোড়ানোসহ বিভিন্ন ঘটনায় শাসক দল ও এর সহযোগী সংগঠনের লোকজনকে পুলিশ হাতেনাতে ধরেও তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে আমার বাসায় বোমা হামলার প্রকাশ্য হুমকি দেয়া সত্ত্বেও ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।”
বিরোধী দলের নেত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজে বিরোধী দলের লোকদের মালিকানাধীন যানবাহনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রকাশ্য উস্কানি দিয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে কে মামলা করবে?”
খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, “স্বৈরশাসকের পথ বেছে নেবেন না। তাহলে পরিণতি স্বৈরশাসকদের মতোই হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে সংলাপের মাধ্যমে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পথ খুলে দিন। শান্তি, স্থিতি, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র অব্যাহত রাখুন।”
কিছুদিন ধরে দলের সিনিয়র নেতারা পুলিশি হয়রানির কারণে নিজেদের বাসায় থাকতে পারছেন না অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, “তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। আমাদের যে নেতারা প্রকাশ্য জীবন যাপন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তাদেরই আজ নাশকতার উসকানি দেয়ার অভিযোগে মামলার আসামি করা হয়েছে।”
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখার কথা উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, “দলের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সেই অবরুদ্ধ কার্যালয়ে আটকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় দলের বক্তব্য নিয়মিত প্রচার করছেন। সেই সুযোগটুকু বন্ধ করে দিতে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।”
এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “পুলিশের গুলি ও সুপরিকল্পিত নাশকতায় যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।” দলমত-নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তথা দেশবাসীকে ন্যায়সংগত সংগ্রামে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিবৃতিতে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে আটক নেতাকমীদের মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি এবং একতরফা নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানান বেগম জিয়া।
No comments:
Post a Comment