মিজানুর রহমান | ২ জানুয়ারি ২০১৪
মানবজমিন : পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। কাল কি হবে তা আন্দাজ-অনুমান করাও দুস্কর! এক তরফা নির্বাচনের বাকী ৭২ ঘণ্টারও কম। দিনের হিসাবে ৩ দিন। নির্বাচন কমিশনে বেজায় ব্যস্ততা। আজ পুরো কমিশন যাচ্ছেন বঙ্গভবনে। ৫ই জানুয়ারী ১৪৭ আসনে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি জানতেই না-কী তাদের এ যাত্রা। কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ এক কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে ‘প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে যাচ্ছেন’ বলে দাবি করেন। অবশ্য ভিন্ন আলোচনা এখন দেশের সর্বত্র। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গন তো বটেই, দেশের সাধারণ মানুষের মাঝেও ওই আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভোটের দিনের আগে পরে দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানীর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এরই মধ্যে। সরকার ও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরাও নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। ভোট প্রার্থনা সভায় খোদ প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, নির্বাচন বন্ধের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি খোলাসা করেননি। তবে তার বক্তৃতায় বিশিষ্টজনদের ইঙ্গিত করেছেন। ব্যাপক সহিংসতা এড়ানোর জন্য নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নির্বাচন বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এ দাবির পক্ষে অকাট্য, যুক্তি নির্ভর ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে। জোর করে ভোট গ্রহণ করতে গেলে কেবল রাজপথের সংঘাতই নয়, দীর্ঘ মেয়াদে পুরো দেশকেই এর মাশুল গুনতে হবে এ সতর্ক বার্তাও আসছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে। বার্ষিক ছুটি আর বড় দিনের ব্যস্ততার জন্য সঙ্কট সমাধানে দীর্ঘ সময় ধরে চলা কূটনৈতিক তৎপরতা খানিকটা বিরতি পড়েছিল। বাংলাদেশের বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগীরা অন্তিম মুহূর্তে আবারও সবর হয়েছেন। আসন্ন সংঘাত-সহিংসতা এড়ানোর কৌশল খূঁজছেন তারা। তবে এটি যাতে বিবদমান সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়- তাই নিয়ে কাজ করছেন তারা। কূটনৈতিক সূত্র মতে, অন্তিম তবে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমেক্রেসি’ কর্মসূচি চলাকালে অবরুদ্ধ বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বৃটিশ হাই কমিশনার বরার্ট গিবসন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসালামের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছে। একই ইস্যুতে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নেত্রীদ্বয়ের তরফে কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষাকারী নেতাদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ চলছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশিত একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে তারা কথা বলছেন। দেশের মানুষ যে এক তরফা নির্বাচন চাইছে না তা উভয়কে বুঝানোর চেষ্টায় শেষ মুহুর্তের দুতিয়ালী চলছে বলে জানা গেছে। দায়িত্বশীল সূত্র মতে, ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার প্রবল আশঙ্কার ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন বন্ধে দেশীয় জনমতের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থন দিয়েছে। আপাতত তা স্থগিত করে সংবিধানের মধ্যেই একটি সমাধানের উপায় নিয়ে দূতরা আলাচনা করছেন। তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে বলেও কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
No comments:
Post a Comment