আমাদের সিলেট ডটকম:
আগামীকালে সংসদ নির্বাচনের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে সিলেট-২ আসনে চলছে নানা হিসেব নিকেশ। আলোচনায় আসছে নানা ইস্যু। স্বতন্ত্র হলেও ব্যাপক গণসম্পৃক্ত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, নাকি মহাজোটের সর্বশক্তি বিনিয়োগের বিনিময়ে উঠে আসা নবীন প্রার্থী, জাপা নেতা ইয়াহিয়া চৌধুরী- কে পরবেন জয়ের মালা তা নিয়েই মূলত: আলোচনা হচ্ছে উপজেলার সর্বত্র। তবে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তথা ১৮ দলের কোন প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনে পরিলক্ষিত হচ্ছে উৎসবের আমেজ।
উৎসবের আমেজ না থাকলেও এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়ার সমর্থকরা গত ক’দিনের প্রচার প্রচারণায় চেষ্টা চালিয়েছে মাঠ মাতিয়ে রাখতে। পূর্বের সবকটি সংসদ নির্বাচন এই সংসদীয় আসনে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হলেও এই প্রথম প্রানহীন নির্বাচন হবে বলে ধারন করা হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যেও ভোট প্রদানের তেমন কোন আগ্রহ নেই। বিএনরি নেতৃত্বাধীন ১৮দলীয় জোট নির্বাচনের দিন ভোট প্রতিরোধের ঘোষনা দেওয়ায় নির্বাচন নিয়ে অজানা উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এমনাবস’ায় ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপসি’তি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
এদিকে ভোটকে কেন্দ্র করে বিশ্লেষকদের বিগত কয়েক দিনের ধারনা ‘কোন প্রার্থীর চেয়ে কার পাল্লা ভারি’ নির্বাচনের শেষ মূহূর্তে তা পাল্টে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এ আসন থেকে বিশ্বনাথ উপজেলার দুই বারের নির্বাচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘আনারস’ প্রতীক মার্কা ও জাতীয় পার্টি’র (এরশাদ) কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ‘লাঙ্গল’ প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুহিবুর রহমান জাতীয় পার্টি থেকে ‘লাঙ্গল’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে তৃতীয় স’ান অর্জন করেছিলেন। ঐ নির্বাচনের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর নবম সংসদ নির্বাচনে শফিকুর রহমান চৌধুরী অনেকটা নাটকীয় ভাবে আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমানের কাছ থেকে মহাজোটের মনোনয়ন টিকিট কেড়ে নেন। সেই নির্বাচনে ইলিয়াস আলীর মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে রীতিমতো অবাক করে দেন প্রবাসী এই নেতা। ১০ম সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন দাখিল করেন এবং অনেকটা নিশ্চিত ছিলেন রানিং এমপি হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন। কিন’ হঠাৎ করেই যেন বদলে গেলো দৃশ্যপট। আওয়ামী লীগ এই আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যারের সিদ্ধান- নেয়। কেন্দ্রের নির্দেশে শেষ পর্যন- মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন শফিকুর রহমান চৌধুরী। নবম সংসদ নির্বাচনে মুহিবুর রহমানের মনোনয়ন কেড়ে নিয়ে নির্বাচিত হওয়া সাংসদ শফিকুর রহমান একই ভাবে ১০ম সংসদ নির্বাচনে এসে জাতীয় পার্টির তরুণ নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী কাছে নিজের টিকেট হারান। ফলে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় নানা কৌতুহল।
আগামীকালেরনির্বাচনে এই আসনে হেভিয়েট প্রার্থী ইলিয়াস-শফিক না থাকায় ভোটের পাল্লা ভারি হতে থাকে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাইড লাইনে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানের। তবে, অনেকেই বলছেন- গত ৩/৪ দিন থেকে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করেছে। গত ৩০ ডিসেম্বের আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এহিয়াকে সমর্থন করে। এরপর থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ স’ানীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এহিয়ার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। মুহিবুর রহমানকে আটকাতে বিরামহীনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। আবার আনারস প্রতীকে সমর্থকরা বলছেন, প্রকাশ্যে না আসলেও গোপনে গোপনে মুহিবুর রহমানের পক্ষেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এহিয়ার পক্ষে মাঠে কাজ করার কারণে শেষ পর্যন্ত ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
সিলেট-২ আসন নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে অধিকাংশ ভোটার ইলিয়াস বিহীন নির্বাচনে যেতে অনিহা প্রকাশ করছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী এই আসনের একজন হেভিয়েট প্রার্থী ছিলেন। জনপ্রিয় এই সাবেক সাংসদ এম. ইলিয়াস আলী নিঁখোজ হওয়ার পর থেকে এই আসনে বিএনপি নানা ইস্যুতে আন্দোলন করছে। তাই ইলিয়াস বিহীন নির্বাচন তাদের কাছে মূল্যহীন। ফলে, তারা নির্বাচনে ভোট থেকে ভোটারদের বিরত রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনমুখী স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী মুহিবুর রহমান ও ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়ার পক্ষে গোপনে গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি সমর্থক জানান, ইলিয়াস আলীকে সরকার গুম করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চায়। তাই তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করতে মুহিবকে ভোট দেবেন।
অপর দিকে বিএনপির অন্য এক সমর্থক জানান, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর পরই মুহিবুর রহমান ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কটুক্তিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। আর এখন নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভোট পেতে মুহিব মায়া কান্না করছেন। তাই তারা মুহিবকে পরাজিত করতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এহিয়াকে ভোট দেবেন। এছাড়া, আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা মনে করছেন, এই আসনে ইয়াহিয়া চৌধুরী পরাজিত হলে তা হবে আওয়ামী লীগের পরাজয়। তাছাড়া, মুহিবুর রহমান বিজয়ী হয়ে গেলে, দলে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবেন। সুতরাং, টিকেট বঞ্চিত এমপি শফিক চৌধুরীর সমর্থনকরাই চাইবেন না মুহিবুর রহমান বিজয়ী হোন। আর এ কারণে শফিক চৌধুরীর অনুসারীরা দিন রাত কাজ করছেন এহিয়া চৌধুরীর পক্ষে।
একদিকে, ২ বারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া জয়লাভ করবেন এমনটাই আশা করছেন তার সমর্থকরা। অপরদিকে, সঠিকভাবে নির্বাচন হলে মুহিবুর রহমান এ আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এহিয়াকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হবেন বলে মুহিব সমর্থকরা মনে করছেন।
সিলেট-২ আসনে চলছে শেষ মুহূর্তের হিসেব নিকেশ : আলোচনায় নানা ইস্যু
Friday, January 3, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment