সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিন সুনামগঞ্জ) নিয়ে গঠিত আসনটি আওয়ামী লীগের আসন না প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের আসন তা প্রমাণ করতে মরিয়া দুই প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ মান্নান আওয়ামীলীগের দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের আসন হিসেবে নৌকা প্রতীকের পক্ষে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অপরদিকে, এ নির্বাচনী আসনের প্রয়াত সাংসদ জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে উত্তরাধিকারী রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন তাঁর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুস সামাদ ওরফে ডন। তবে এলড়াইয়ে তিনি তাঁর বাবার সতীর্থদের কাছে না পেলেও আওয়ামী লীগ ঘরনার কিছু নেতাকর্মী তাঁর সাথে আছেন।
উপজেলাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৭০ সালে এ আসনে এমপিএ নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুর রইছ। ১৯৭৩ সালে তিনি এ আসনে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন সামাদ আজাদ দিরাই-শাল্লা থেকে নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যা পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা শামসুল আবেদীন। ১৯৮৬ সালে এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে তাঁর ভাই ফারুক রশীদ চৌধুরী জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে প্রথম বারের মতো আবদুস সামাদ আজাদ এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একদলীয় নির্বাচনে বিএনপি নেতা গুলজার আহমদ সাংসদ নির্বাচিত হন। একই সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আবদুস সামাদ আজাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। একই বছর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে অংশ না নিলে নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামী লীগ ঘরনার দুই প্রার্থী। তাঁরা হলেন- বর্তমান সাংসদ সাবেক সচিব এম এ মান্নান ও যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নজরুল ইসলাম। নির্বাচনে অল্পভোটে চারদলীয় জোটপ্রার্থীর কাছে এমএ মান্নান পরাজিত হন। ২০০৮ সালে এমএ মান্নান বিপুল ভোটে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ ডন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালান। কিন’ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।
আজিজুস সামাদের সমর্থক হিসেবে পরিচতি উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য জয়দ্বীপ সূত্রধর বীরেন্দ্র আবদুস সামাদ আজাদ এনির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগকে সংঘটিত করেছেন। তাই তাঁর ছেলে হিসেবে নির্বাচনী এলাকার মানুষ সামাদ আজাদের আসনটিতে তাঁর ছেলেকে দেখতে চায়।
জগন্নাথপুর পৌর আওয়ামীলীগ নেতা লুৎফুর রহমান বলেন, আবদুস সামাদের কারণেই এ এলাকায় আওয়ামীলীগের রাজনীতি বিকশিত হয়েছে। তাই তাঁর ছেলের সাথে আছি।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, সামাদ আজাদ আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতেন বলেই তিনি আমাদের নেতা ছিলেন। তিনি জীবনে নৌকা ছাড়া নির্বাচন করেননি। তাঁর দাবী এনির্বাচনী এলাকা আওয়ামীলীগের ঘাঁটি। এখানকার মানুষ নৌকার বিপক্ষে রায় দেয়নি।
আরেক নেতা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে এনির্বাচনী এলাকায় আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠিত। আবদুস সামাদ আজাদ ১৯৮৬ সাল থেকে এখানকার আওয়ামীলীগের প্রার্থী। তাঁর আগে এডভোকেট আব্দুর রইছ আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ ছিলেন।
আব্দুস সামাদ আজাদের ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহমদ বলেন, সামাদ আজাদ আমাদের নেতা ছিলেন। তিনি জীবনে অনেক বড় বড় প্রস-াব পেয়েছিলেন কিন’ু আওয়ামীলীগের বাহিরে গিয়ে এসব প্রস-াবে রাজি হননি। তাঁর ছেলে আর্দশচ্যুত হয়ে দলের বাহিরে গিয়ে নির্বাচন করবে তা ভাবতে পারিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস সামাদ আজাদ তনয় আজিজুস সামাদ বলেন, আমার বাবা সারা জীবন ভাটি অঞ্চলের মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। আমিও তাদের জন্য রাজনীতি করতে চাই। তাই বাবার আসনটি উদ্ধারে জনগনকে সাথে নিয়ে মাঠে রয়েছি।
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এমএ মান্নান বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন। আওয়ামীলীগের রাজনীতির আর্দশের বাহিরে গিয়ে অনেক বড় নেতা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। আমার মূলশক্তি আমি আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছি। জনগনই প্রমাণ করবে আসনটি কোন ব্যক্তির না আওয়ামীলীগের।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনী ইস্যু আওয়ামীলীগের না সামাদ আজাদ
Friday, January 3, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment