ক্ষুব্ধ হেফাজত : শফীকে থামিয়ে দিলো পুলিশ

Monday, December 23, 2013

মানবজমিন: রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছে হেফাজতে ইসলাম। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও উলামায়ে কেরাম। তারা বলেন, দেশকে ইসলামশূন্য করার জন্যই

শাপলা মহাসমাবেশ নিয়ে বার বার চক্রান্ত চলছে। এ মহাসমাবেশের অনুমতি না দিয়ে সরকার প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ১৩ দফা দাবি আদায়ে প্রায় এক মাস আগে এই সমাবেশের ঘোষণা দেয় হেফাজত। সরকারের নানামুখী বাধার মুখেও অনড় থাকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই সমাবেশকে ঘিরে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। সমাবেশ হবে কিনা তা নিয়ে দোটানা অবস্থান তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর হেফাজতের পক্ষ থেকে সমাবেশ স্থগিত করার ঘোষণা প্রচার হয় গণমাধ্যমে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ এ ঘোষণার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীকেন্দ্রিক একাধিক শীর্ষ নেতা। তারা বলেন, শেষ পর্যন্ত সমাবেশ সফল করার চেষ্টা চলছে। আল্লামা শফী যে কোন মূল্যে এই সমাবেশ করার পক্ষে। তবে সরকারের বাধায় সমাবেশ করতে ব্যর্থ হলে সঙ্গে সঙ্গেই পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে। ঢাকা মহানগর হেফাজতের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী ও সদস্য সচিব জুনায়েদ আল-হাবিব বলেন, আমাদের সমাবেশকে ঘিরে বেশ কিছু মিডিয়া বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রচার করছে। এতে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। সমাবেশ আমরা মুলতবি করিনি। বরং সরকার আমাদেরকে সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তারা বলেন, ঢাকা মহানগরের সকল জোনের নেতাকর্মীদের এবং বৃহত্তর ঢাকা ও এর আশপাশ অঞ্চলের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ ও তৌহিদী জনতাকে আজ সকাল ১১টায় বারিধারা মাদ্‌রাসায় উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। দেশের চলমান সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে বারিধারায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হবে। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা কাসেমী বলেন, সরকার আমাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। তাছাড়া সকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ্‌ আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হলে পুলিশ র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা তাদের আটকে দেয়। তিনি জানান, সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজীজুল হক ইসলামাবাদী চট্টগ্রাম থেকে মানবজমিনকে জানান, ঢাকায় কর্মসূচি স্থগিতের ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা এখনও সমাবেশ করার বিষয়ে অনড়। আল্লামা শফীও সমাবেশ হবে বলেই জানিয়ে দিয়েছেন। গণমাধ্যমে ঢাকা মহানগর নেতার বক্তব্য জানতে পেরে আল্লামা শফি ফোন করেছেন কাসেমীকে। তিনি স্থগিত করার ব্যাপারে কোন বক্তব্য দেননি বলে জানিয়েছেন। তবে সরকারের বাধার কারণে সংশয় ব্যক্ত করেছেন।

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, ঢাকার শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার পথে হেফাজত আমীর আল্লামা শফী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন। এরপর দলের মহাসচিবসহ অন্তত ৫০ জনের একটি বহর নিয়ে তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় ফেরত যান। তবে এ দাবিকে অস্বীকার করে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বলেছেন, তাদের কাছে হুজুর শফীকে আটকে রাখার কোন তথ্য উপরের মহল থেকে জানানো হয়নি। তবে তাকে হরতালে চলাফেরা না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘হুজুর শফী মাদরাসা থেকে বের হয়ে দেখেন সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার অনেক লোক রাস্তায় জমায়েত হয়েছেন। এরপর তারা ঢাকায় না যাওয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দেন। এ সময় মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা মিছিল করেছে।’ হাটহাজারী থানার ওসি মো. ঈসমাইল বলেন, ‘হুজুর শফী এখন মাদরাসার ভেতরে আছেন। তাকে আটক করার কোন বিষয় আমাদের জানা নেই। তার সঙ্গে কথা হয়েছে দু’দফা। তিনি আমাদের কাছ থেকে হরতালের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমরা বলেছি রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারেন। এরপর তিনি আর বের হননি।’ হেফাজত নেতারা জানান, সোমবার সকালে তার মাদরাসা থেকে বের হয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। এরপর ঢাকায় পৌঁছে যোগ দিতেন মহাসমাবেশে। ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলাম এ মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন। সমাবেশ সফল করার আগে দলের শীর্ষ নেতারা এক বিবৃতিতে জানান, মহানবী (সা.) শানে যারা বেয়াদবি ও কটূক্তি করে তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এক শ্রেণীর নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠী দেশে মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল (সা.)-এর শানে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে মুসলমানদের হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে দেশে বিরাজমান সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়। এদের প্রতিহত করা প্রত্যেক মুসলমানের নৈতিক কর্তব্য। সমপ্রতি সরকার নানা অজুহাত ও ছলছুতো দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাফসিরুল কুরআন মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল, ইসলামী সম্মেলন প্রভৃতি ধর্মীয় কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে প্রকাশ্যে ইসলামবিদ্বেষী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। হেফাজত নেতৃবৃন্দ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা এ দেশের সন্তান, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর শানে যারা বেয়াদবি করে এবং তাদের যারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা মুমিন হিসেবে আপনাদেরও নৈতিক দায়িত্ব। হেফাজতে ইসলাম সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনাদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। যা কখনও কাম্য নয়। আপনাদের ভূমিকা যদি আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর দুশমনদের পক্ষে যায় তাহলে এর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। পরকালে এ অপরাধে ভয়াবহ ও কঠিন আযাব ভোগ করতে হবে। আমরা আহ্বান জানাই কোনও খোদাদ্রোহী, নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠীর ক্ষমতা রক্ষায় আপনারা ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না। হেফাজতে ইসলামের কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। ১৩ দফা ঈমানি দাবি শুধু আলিম সমাজের নয়, সকল নবী প্রেমিক মুসলমানের। যারা নিজের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর শত্রুদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের লালন-পালন করে গদি রক্ষার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে, নাস্তিক-মুরতাদের বিরুদ্ধে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তাদের সমর্থন করা কোনও মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয়।

এদিকে সমাবেশ না হওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ উলামারা বলেন, কতিপয় সুবিধাভোগী নিকৃষ্ট দুনিয়াদার উলামায়ে ছুঁ লোভে পড়ে বারবারই হেফাজতের ঈমানী আন্দোলনকে সর্বনাশ করে দিচ্ছে। তারা বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা দুনিয়ালোভীদের মুখোশ উন্মোচন করতে না পারলে তারা ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে বরবাদ করে দেবে। তারা বলেন, শাপলা মহাসমাবেশ সফল করার জন্য ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুতি হিসেবে মঞ্চ, মাইক, ডেকোরেশন সবই আয়োজন করা হয়। মহাসমাবেশে যোগদান করার জন্য হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হাটাজারী থেকে রওনা-ও দিয়েছিলেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে না আসতে পেরে তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ না যেতে পারলেও ঢাকার মহাসমাবেশ হবেই। একই সঙ্গে মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন যে কোন মূল্যে মহাসমাবেশ সফল করা হবে। ঢাকায় না হলে সারা দেশে হবে। হেফাজতের আমীর ও মহাসচিবের এ শক্ত ঘোষণার পরও দুনিয়াদার কতিপয় নেতা তড়িঘড়ি করে মহাসমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করলেন কিসের লোভে? তারা বলেন, আমরা সারা দেশ থেকে কেন্দ্রে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছি, কেন্দ্রীয় হেফাজত মহাসমাবেশ স্থগিত করেননি। বিশিষ্ট আলেমগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- হেফাজতের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এ সুবিধাভোগী নেতারা হেফাজতের কর্মসূচি স্থগিত করিয়ে বারবারই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা বলেন, ৫ই মে শাপলা চত্বরে কোন সমাবেশের কথা ছিল না। সিদ্ধান্ত ছিল ঢাকার ৬টি প্রবেশ মুখে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। অথচ দুনিয়ালোভীরা রাতের আঁধারে ষড়যন্ত্র করে সকল নিরীহ আলেম-উলামাদেরকে নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতেই ৫ই মে সকালে শাপলা সমাবেশের অনুমতি চায়। পুলিশ প্রশাসনও তড়িঘড়ি করে অনুমতি দিয়ে দেয়। ফলে নিশ্চিত মৃত্যু ও ধ্বংসের মুখে সাধারণ নিরীহ আলেম, হাফেজদেরকে ঠেলে দিয়ে চক্রান্তকারী নেতারা মঞ্চ ছেড়ে পালিয়ে যান। তাদের কেউ কেউ পরদিন লন্ডন বা বিদেশে পাড়ি জমান। এদিকে মহাসমাবেশের ব্যাপারে সরকারের নগ্নবাধা ও সুবিধাবাদী কথিত দালাল গোষ্ঠীর চক্রান্তের প্রতিবাদে হাটাজারী ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হেফাজত এবং সাধারণ মুসল্লি সমাজ।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License