আমারদেশ: বাসভবনের সামনের নেই নিয়মিত পুলিশি প্রহরা। সামনের রাস্তায় চারটি বালুভর্তি ট্রাক এলোমেলো অবস্থায় রেখে সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, অবরুদ্ধ অবস্থা নিশ্ছিদ্র করার জন্য ফেলে রাখা হয়েছে ট্রাকভর্তি রোডব্লক।
গতকাল এই ছিল বিরোধীদলীয় নেতা, দেশের বৃহত্তম দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের চিত্র। বাসভবন থেকে খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে যেতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। ফলে চেষ্টা করেও বাসভবন থেকে বের হতে পারেননি তিনি।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিভিন্ন জরিপে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর বাসভবনের সামনের সড়ক যখন রোডব্লক দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে, তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শাইরুল কবির খান জানান, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসভবন থেকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে যেতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। গতরাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনের সামনে থেকে পুলিশের প্রটোকল তুলে নেয়া হয়। সেই সঙ্গে তার বাসভবনের দু’পাশের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দিয়েছে পুলিশ। এর আগে রাত সাড়ে ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।
বিরোধীদলীয় নেতার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ প্রটোকল প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা অনুসারে প্রাপ্য পুলিশি প্রটোকল নেই, তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাই মরহুম সাঈদ এস্কান্দরের ছেলের বিয়েতে যোগদানের জন্য তার প্রথমে গলফ ক্লাবে ও পরে রাত সাড়ে ৮টায় গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ও জাসদ (রব) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল।
উল্লেখ্য, ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর ঢাকামুখী মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের তার সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না পুলিশ। খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে দেখা করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন দলীয় এমপি শাম্মী আখতার ও সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনিকে আটক করার পর ছেড়ে দেয় পুলিশ। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানকেও সাক্ষাত্ করতে দেয়নি পুলিশ।
সরকারের ন্যক্কারজনক ফ্যাসিবাদী আচরণ—মির্জা আলমগীর
বিরোধীদলীয় নেতার প্রটোকল সরিয়ে নেয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত রাতে দলের সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমের সই করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, আজ রাত (শনিবার) ৮টা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতাকে তার গুলশানের কার্যালয়ে যেতে দেয়া হচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে তার বাসভবন ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। বেগম জিয়ার বাসার সামনে বালুভর্তি ট্রাক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক গাড়ি এলোপাতাড়ি করে রেখে রাস্তার দু’পাশে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি সরকারের এহেন ন্যক্কারজনক ও চরম ফ্যাসিবাদী আচরণের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি আরও গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সরকার অবৈধ ও বেআইনিভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আমি অবিলম্বে বিরোধীদলীয় নেতার সার্বিক নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’
No comments:
Post a Comment