এদিকে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সাংবাদিকদের বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করার মতো আইনী জটিলতা তৈরি হয়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরেই এ নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে বা হয়নি, তা বোঝা যাবে
বলেও তিনি মন্তব্য করেন। শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এত বিপুলসংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। যদি এ ধারায় সরকার গঠিত হয়, তাও হবে বাংলাদেশে প্রথম। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে মোট ৪৮টি আসনে ৪৭ জন এবং ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দশম জাতীয় সংসদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১২৬ জন, জাতীয় পার্টির (জাপা) ১৮ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) তিন জন এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির দুই জন নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার ১৯ (১) দফা অনুযায়ী, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না রিটার্নিং কর্মকর্তা কমিশন থেকে লিখিতভাবে নিশ্চিত হবেন যে, কোনো মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো আপীল দায়ের করা হয়নি বা দায়েরের ক্ষেত্রে কমিশন তা মঞ্জুর করেনি।
ইতিমধ্যে মনোনয়ন যাছাই-বাছাইয়ের পর আপিল নিষ্পত্তি শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়ও শেষ। কাজেই এখন যাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই, তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা শনিবারই নির্বাচিত বলে ঘোষণা করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের সমন্বয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফরহাদ হোসেন আগেই নতুন বার্তা ডটকমকে জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৫০টি আসনে একজন করে প্রার্থী আছেন। তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
এদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ঢাকার আটটি আসনে মোট ২৩ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে বিভাগীয় নির্বাচন কমিশনার মো. জিল্লার রহমান। শনিবার দুপুর পৌনে একটার দিকে সেগুনবাগিচার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এই প্রতীক বরাদ্দ দেয়া শুরু করেন তিনি। ঢাকা-৪ আসনে আওলাদ হোসেনকে (স্বতন্ত্র) হাতি এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে (জাতীয় পার্টি) লাঙল প্রতীক দেয়া হয়।
বিভিন্ন জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভোলা-১ তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-৪ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঝালকাঠি-২ আমির হোসেন আমু, বরিশাল-১ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল-৫ শওকত হোসেন হিরণ, পিরোজপুর-১ এ কে এম এ আওয়াল (সাইদুর রহমান), সিলেট-১ আবুল মাল আবদুল মুহিত, সিলেট-৬ নুরুল ইসলাম নাহিদ, সিলেট-৩ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৪ উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ, সুনামগঞ্জ-২ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আনিসুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ এ বি তাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১ প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম-৭ হাছান মাহমুদ, চাঁদপুর-১ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, চাঁদপুর-২ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, চাঁদপুর-৩ দীপু মনি, চাঁদপুর-৫ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুর-২ শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ থেকে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শরীয়তপুর-২ শওকত আলী, নোয়াখালী-৫ যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কুমিল্লা-১০ আ হ ম মোস্তফা কামাল, রংপুর-৫ এইচ এন আশিকুর রহমান, রাজশাহী-১ ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৪ এনামুল হক, রাজবাড়ী-২ কাজী কেরামত আলী, নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৪ শামীম ওসমান, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-২ কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ, ঢাকা-১০ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৯ মো. এনামুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ-৩ মৃণাল কান্তি দাস, যশোর-১ শেখ আফিল উদ্দিন, সাতক্ষীরা-৩ আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-৪ জগলুল হায়দারসহ আওয়ামী লীগের ১২৬ জন প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেই তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
এ ছাড়া সিলেট-৫ সেলিম উদ্দিন, হবিগঞ্জ-১ এম এম মনিম চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমানসহ জাতীয় পার্টির ১৭ জন প্রার্থীর আসনে অন্য কেউ প্রার্থী নন। ফলে এই আসনগুলোর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে তাঁরা বেসরকারিভাবে সাংসদ নির্বাচিত হবেন। যদিও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কুষ্টিয়া-২ থেকে হাসানুল হক ইনুসহ তিনজন নৌকা প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা-৮ রাশেদ খান মেনন, রাজশাহী-২ ফজলে হোসেন বাদশা ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নৌকা প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হচ্ছেন। জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে পিরোজপুর-২ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment