ইব্রাহিম খলিল, (লন্ডন) যুক্তরাজ্য থেকে : বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে দেশের মানুষের মতো শঙ্কিত যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। হরতাল, ভাংচুর আর হানাহানির রাজনীতি থেকে দেশের উত্তরণ কবে হবে- এ নিয়ে হতাশ প্রবাসীরা। প্রবাসীরা অভিযোগ করছেন, দেশের এই অবস্থার জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরা। তাদের মতে, এই অবস্থা চলতে থাকলে অনিশ্চিত দেশের ভবিষ্যত।
প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস এলে বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য টিকেট কিনতে প্রবাসীরা ভিড় করেন লন্ডনের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে। ডিসেম্বর মাসে বৃটেনের স্কুল হলিডে উপলক্ষে দেশে ফেলে আসা স্বজনদের দেখতে দেশে যান প্রবাসীরা। কিন্তু এ বছর লক্ষ্য করা যাচেছ ব্যতিক্রম।
ট্রাভেল এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় তাদের ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে। যারা ডিসেম্বরের স্কুল হলিডে’র জন্য অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন তারা এখন আসছেন টিকিট বাতিল করতে। পূর্ব লন্ডনের ইমরান ট্রাভেলস এর স্বত্ত¡াধিকারী আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, অগ্রিম টিকিট বুুকিং দিয়ে রাখা অনেক টিকিট তিনি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন যাত্রীদের চাপে। বিশেষ করে সা¤প্রতিক দিনগুলোতে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠা বাংলাদেশ ভ্রমনকে তারা অনিরাপদ মনে করছেন। তিনি জানান, এই বছর সবচেয়ে লোকসান গুনতে যাচেছন ট্রাভেল মালিকরা। এর প্রভাব বাংলাদেশের রেমিটেন্সেও পড়বে বলে তার আশংকা।
বৃটেনে বাংলাদেশী মালিকানাধীন ট্রাভেল ব্যবসা ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডন-ঢাকা, লন্ডন-সিলেট ফ্লাইটের সবচেয়ে পিক সময় হচেছ জুলাই এবং ডিসেম্বর হলিডে। এই সময়ে বাংলাদেশ বিমানে সবচেয়ে বেশী ভ্রমণ করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। সেই সুবাদে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের চেয়ে বিমানের টিকিট মূল্যও চড়া থাকে। কিন্তুু এবার বিমান সেই পিক সময়ে তুলনামুলকভাবে ২০ ভাগ ভাড়া কমিয়েও যাত্রী আকর্ষণ করতে পারছেনা।
বিমানের লন্ডন অফিসের কান্ট্রি ম্যানেজার অতিকুর রহমান চিশতী জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের সবচেয়ে পিক সময়ে এই ভাড়া কমিয়ে যাত্রীদের বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহিত করতে চাই। আশা করি তারা এই সুবিধা উপভোগ করবেন।
এদিকে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী প্রবাসী বিনিয়োগ যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের। তাই দেশের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারী। কমিউনিটি নেতা সাদ গাজী জানান, সিলেট ও ঢাকার টঙ্গিতে তার বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি দেশ নিয়ে শংকা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে হরতাল ও হানাহানি অব্যাহত থাকলে আমাদের সবকিছু গুটিয়ে বিদেশে চলে আসতে হবে। তিনি দুই নেত্রীর সমাঝোতা আশা করে দেশের মানুষ পরিত্রান দেওয়ার আহবান জানান।
একইভাবে শংকা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ডাইরেক্টর ও জেএমজি কার্গোর স্বত্ত¡াধিকারী মনির আহমদ। বাংলাদেশ বিমানের ৮০ ভাগ কার্গো একাই পাঠিয়ে থাকে তাঁর প্রতিষ্ঠান-এমন দাবী করে তিনি বলেন, লন্ডনে ক্রমবর্ধমান এই কার্গো ব্যবসাটিও হুমকির মুখে পড়বে দেশের সার্বিক এই অবস্থা বিরাজমান থাকলে।
তবে অধিকাংশ প্রবাসী আশা প্রকাশ করেছেন, এই সমস্যার একটি সমাধান অবশ্যই হবে;তবে তার আগে দুই নেত্রীকে আগে সমঝোতায় আসতে হবে।
No comments:
Post a Comment